শরীয়তপুরে ৪৮৬ কোটি টাকার পাট উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের
- শরীয়তপুর প্রতিনিধি
- ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০৫
পাট আবাদ মৌসুমে দীর্ঘ সময় খরা ও ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে শরীয়তপুরে পাটের ফলন কিছুটা কম হলেও বর্তমানে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা মহা খুশি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট কাটা ও জাঁক দিয়ে সোনালি আঁশ বের করে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ দিকে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ৪৮৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে ফরিয়া ও সিন্ডেকেটকারী ব্যবসায়ীরা যাতে পাটের বাজার দাম কমিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটতে না পারে সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে নজরদারির দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলায় চলতি মৌসুমে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ২০০ হেক্টর। আবাদের সময় লাগাতার খরার কারণে আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৮১৪ হেক্টরে। এরপর মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ১১৭ হেক্টর জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে পাটের ফলন কিছুটা কম হলেও ৬৪ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করছেন শরীয়তপুরের কৃষি বিভাগ। জেলায় আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে দেশী, তোষা, মেসতা ও কেনাফ জাতের পাট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে তোষা জাতের। বর্তমানে পাটের প্রকার ও মান ভেদে প্রতি মণের দাম রয়েছে ৩২০০-৩৬০০ টাকা। এতে প্রায় ৪৮৬ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার পাট বিক্রি করতে পারবেন শরীয়তপুরের চাষিরা। তবে ফরিয়া ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বর্তমান বাজার দাম কমিয়ে প্রান্তিক পাট চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সেই দিকে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের কৃষি বিপণন (দায়িত্বপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা বাবুল হোসেন জানান, পাটের বাজারদর মিল মালিকদের চাহিদার ওপর অনেকটা নির্ভর করে। তবে ফরিয়ারা সিন্ডিকেট করে বাজার দাম কমিয়ে যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সেই বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
নড়িয়া উপজেলার প্রশাসন ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামের পাট চাষি নজরুল ফকির বলেন, পাট আবাদের সময় খড়া থাকার কারণে এবং ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে এবার পাটের ফলন কিছুটা কম হবে। গত মৌসুমে যেখানে বিঘায় ৭-৮ মণ ফলন পেয়েছি, এবার সেখানে কিছু কিছু জমিতে ফলন দেড় থেকে দুই মণ কম হবে। তবে গতবারের চেয়ে দাম বেশি থাকায় ফলন একটু কম হলেও টাকায় পুষিয়ে যাবে। ভরা মৌসুমের সময় সিন্ডিকেট করে ফরিয়ারা যাতে পাটের দাম না কমিয়ে দেয় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের নজরদারি আশা করছি।
জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক কামাল মাদবর বলেন, গত দুই বছর ধরে আমি নিজেদের উৎপাদিত রবি-১ জাতের লাল পাট আবাদ করছি। এ জাতের পাট খরা ও পানি সহিষ্ণুুতা একটু বেশি হওয়ায় খরায়ও ফলন কমবে না। পাঁচ বিঘাতে আমি ৩৮-৪০ মণ ফলন পাব বলে আশা করছি। বর্তমানে প্রতি মণ পাট পাইকাররা ৩০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় কিনছেন। যদি ভরা মৌসুমে সিন্ডিকেট করে দাম না কমায় তাহলে আমি বেশ লাভবান হবো।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, কৃষিনির্ভর শরীয়তপুরের কৃষকদেরকে বেশি লাভবান করতে মাটির উপযোগিতা অনুযায়ী ফসল আবাদে প্রণোদনা, মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছি। ফলে জমির উপযোগিতা অনুযায়ী কৃষকরা যেকোনো ফসলের সাথে সাথী ও অতিরিক্ত ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এবার অতি খরা এবং ঘূণিঝড় রেমালের প্রভাবে পাট আবাদ ও ফলন কিছুটা কম হলেও ভালো দামের কারণে শেষ পর্যন্ত কৃষকরা লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি। জেলার কৃষকরা পাট কাটা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ২৫ শতাংশ কাটা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা