যমুনার পানি কমলেও বিপদসীমার ৪১ সেমি ওপর দিয়ে বইছে
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
টাঙ্গাইল, বগুড়া ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়িঢলে নদী ভাঙনের কারণে ১৫ হাজার পরিবার হুমকিতে রয়েছে। বগুড়ায় যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও গতকাল বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুষ্ক খাবার, গোখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটে ভুগছে অনেক পরিবার। বিশেষ করে নিচু এলাকার টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়াতে এ সঙ্কটে পড়েছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়ের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। কোথায়ও কোথায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক বসতবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে।
এ দিকে পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টির কারণে বানভাসি মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। অনেক পরিবারের ঘরে মাচিতে পানি ওঠাতে ভুট্টাসহ না ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। অনেকে আবার কম দামে ফসল, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছে। আবাদি জমি ডুবে যাওয়াতে গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
গাবসারার কালিপুর গ্রামের সবুর আলী জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছি। এ ছাড়া কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরে খাবারও নেই, দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গজভাগ গ্রামের মনিপুরী এলাকায় মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধলইছড়ার (সরকারি খাল) ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে আদিবাসী মনিপুরি ১৫ পরিবারের বাড়িঘর। বাড়িঘর রক্ষায় অনেকে ব্যক্তিগত গাইড ওয়াল দিলেও পাহাড়ি ঢলে তা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। বাড়িঘর রক্ষায় খালের ভূমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধার, পরিকল্পিতভাবে খনন ও গাইডওয়াল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের গজভাগ গ্রামের মনিপুরি পাড়ায় অনাদিকাল থেকে ২৫-৩০টি আদিবাসী মনিপুরি পরিবার বসবাস করছেন। মনিপুরিপাড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত উজান থেকে নেমে আসা ধলইছড়া (সরকারি খাল) এখন ওই পাড়ার ১৫-১৬ পরিবারের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে খালের পাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘর হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে ওই খালের নিচু এলাকায় সরকারিভাবে ২০০ মিটার স্থান খনন করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অপরিকল্পিতভাবে এই খননকাজ করায় খালের উজানে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে খালসংলগ্ন কয়েকটি বাড়ি ও ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত গাইডওয়াল হেলে পড়েছে।
সরেজমিন গেলে ভুক্তভোগী নীলমনি সিংহ, মোদন সিংহ, পরিমোহন সিংহ জানান, পাথারিয়া পাহাড় থেকে ওই খালের উৎপত্তি। অনেক জায়গা খালের ভূমি দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে খালের পাড়ের বাড়িঘর ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। ইতিপূর্বে খালের নিচের এলাকায় কিছু জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে খননকাজ করায় ছড়ায় আরো বেশি ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলারয় পাট, আউশ ধান, মরিচ, বীজতলা, ভুট্টাসহ এক হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূূত্রে জানা যায়। যমুনা নদীতে বন্যার পানি স্থিতি অবস্থায় থাকলেও বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ন কবির জানান।
এ দিকে গতকাল মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর ভাঙনকৃত কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশল নাজমুল হক। পরিদর্শনকালে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ৮২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেয়া আছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এটি অনুমোদনের আশা করছি। এ ছাড়া জাইকার একটি প্রতিনিধিদল ভাঙনকৃত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। তাদের ব্যাপারেও আমরা আশাবাদী। বরাদ্দ এলে আমরা সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীখনন করতে পারব। এতে এই এলাকায় যমুনা নদীভাঙন রোধ করা যাবে বলে আশা করছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা