বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ ৬ উদ্যান ও ইকোপার্কে প্রবেশ ফি ৫ গুণ বেড়েছে : মন্ত্রী বললেন অযৌক্তিক

হঠাৎ করেই রাজধানীর উদ্যান ও ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে; যা চলতি জুলাই মাস থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ থেকে গত ২১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও পরিবেশ মন্ত্রী বলছেন এটি অযৌক্তিক। তা পরিবর্তনের দরকার।
জানা গেছে, আপাতত মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেনসহ ছয় উদ্যান ও ইকোপার্কে প্রবেশ মূল্য বাড়ানো হয়েছে। এগুলোতে আগে প্রবেশ ফি সব বয়সীদের জন্য ছিল ২০ টাকা। কিন্তু নতুন নির্ধারিত ফি অনুযায়ী এতে ১২ বছরের বেশি বয়সী দর্শনার্থীদের জনপ্রতি ১০০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের এখন দিতে হবে ৫০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রজ্ঞাপনে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান) এবং রাজধানীর বলধা গার্ডেনে ফি বাড়ানোর তথ্য জানানো হয়। পাশাপাশি কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক ও ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর কথা বলা হয়। এর মধ্যে মধুটিলা ইকোপার্ক বাদ দিয়ে সব ক’টি উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ ফিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের প্রতিজনে ফি দিতে হবে এক হাজার টাকা বা সমমূল্যের মার্কিন ডলার।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের দল বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলে ১০০ জনের একটি দলের জন্য এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এমন দলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হলে দিতে হবে এক হাজার ৫০০ টাকা।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শরীরচর্চার জন্য উদ্যানে যারা নিয়মিত হাঁটতে যান, তাদের জন্য বার্ষিক প্রবেশ কার্ড করতে হবে। এর জন্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। প্রাতঃভ্রমণের জন্য সময়ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা এবং এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কার্ডধারীরা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত উদ্যানে থাকতে পারবেন; অর্থাৎ শরীরচর্চা বা প্রাতঃভ্রমণের জন্য উদ্যানে অবস্থান করা যাবে মাত্র এক ঘণ্টা। যেখানে শরীরচর্চার জন্য আগে উদ্যানে প্রবেশে কোনো ফি দিতে হতো না। কার্ড পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যানের ইজারাদারের কাছে আবেদন করতে হবে। মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ওয়ারীর বলধা গার্ডেনে একই পরিমাণ প্রবেশ ফি দিতে হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রজ্ঞাপনের আগেই মধুটিলা ইকোপার্কের ইজারা দেয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই এখন প্রবেশমূল্য বাড়ানো সম্ভব না। আগামী বছরে মার্চ মাসের আগে প্রবেশমূল্য বাড়ানো যাবে না।
অন্য দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি এক লাফে ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা ‘কিছুটা অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি মনে করেন, এটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটি তার ব্যক্তিগত মতো।
গতকাল সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বন-১ অধিশাখা) এ কে এম শওকত আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’
এ দিকে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি ইকোপার্কের ক্ষেত্রে ভ্যাট যুক্ত করে প্রবেশমূল্য করা হয়েছে ১১৫ টাকা।
মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত মে মাস থেকেই লাউয়াছড়া ও সাতছড়িতে নতুন প্রবেশমূল্য নেয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে এ আদেশ কার্যকরের কথা বলা হয়েছিল বলেই এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।