ধ্বংস করা হচ্ছে ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজগঠন : জি এম কাদের
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৫০
সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজগঠন ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মনে করেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, এ কথা যেন আমরা ভুলে না যাই যে, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে ও যেকোনো পর্যায়ে যেতে প্রস্তুত থাকে। স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। আমাদের শহীদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তি সংগ্রামের আত্মত্যাগের প্রতীক।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরি লাভে বিশেষ বড় অঙ্কের কোটায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে। স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজগঠন ধ্বংস করা হচ্ছে বলে মনে করি। যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না। তিনি বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী, তৃতীয় শ্রেণী এবং চতুর্থ শ্রেণীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। (৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য, ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত)। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেয়া হতো। ২০১৮ সালে মেধাবী ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণী থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের।
তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সে সময় ১ম ও ২য় শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে সব কোটা পদ্ধতির এ নীতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পূর্বের ন্যায় কোটাপদ্ধতি বহাল থাকে। ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। ৫ জুন ২০২৪ রিটের রায় প্রকাশ করেন আদালত। সেখানে জনপ্রশাসন কর্তৃক পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আবার মাঠে নামছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয় তার বেশির ভাগ ব্যয় হয় অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষার উন্নতি মানে শিক্ষার মানের উন্নতি। যে কারণে অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। শিক্ষার উন্নয়ন বা মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মূল কারিগর হলো শিক্ষক। ফলে অবকাঠামোর চেয়েও মানসম্মত শিক্ষক নেয়া ও তৈরি করা আবশ্যক মনে করি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক সব ক্ষেত্রেই মানসম্মত শিক্ষকের অভাব। তার কারণ, প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় খুব ভালো ছাত্রদের আকর্ষণ করার মতো সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি না। ভালো ছাত্ররা এ পেশায় এলেও সুযোগ সুবিধা কম হওয়ার কারণে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যদি শিক্ষকতায়ও তারা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা পেতেন তাহলে এমনটি হতো না।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনে কাঠামোর দিক থেকে এশিয়ার ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৫তম (আমাদের দেশের পরে যে চারটি দেশ আছে তারা হলো লেবানন ২ হাজার ২৬০ টাকা, ইয়েমেন ও উজবেকিস্তান ৯ হাজার ২৫২ টাকা এবং লাওস ১৬ হাজার ৮১৯ টাকা) এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৭ম অর্থাৎ সর্বনি¤œ। আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষার প্রায় ৯৭ শতাংশ বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে কর্মরত প্রায় ৫ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শুধুমাত্র জাতীয় বেতন স্কেলের মূল বেতন পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রেও আমাদের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনি¤œ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভুটান তারা চিকিৎসক ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বেতন দেয়। কোরিয়া, হংকং, জাপানে শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো। এর সুফল কিন্তু তারা পাচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা