১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জনশক্তি প্রেরণে নেতিবাচক প্রভাব, এক মাসে শ্রমিক যাওয়া কমেছে ৮৫ হাজার

ইউরোপের জন্য ঢাকায় ভিসা সেন্টার খোলা দরকার
-

মালয়েশিয়া, ওমান, বাহরাইন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি শ্রমবান্ধব দেশে কর্মী যাওয়ার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশের জনশক্তি ব্যবসার ওপরে। এর মধ্য আবার সৌদি আরবসহ গুরুত্বপূর্ণ যেসব দেশ খোলা রয়েছে সেগুলোতেও সত্যায়ন জটিলতার কারনে কর্মী যেতে না পারায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে শুধু এক মাসের ব্যবধানেই (মে থেকে জুন মাস) প্রায় ৮৫ হাজার শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্য বিদেশে কম গিয়েছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দৈনিক বহির্গমন ছাড়পত্রের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কিছু কাজে সিদ্ধান্ত নিতে সমন্বয়হীনতার কারণে বিদেশগামীদের ওপর এমন প্রভাব পড়ছে। এতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমিকরাই।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে বায়রার নির্বাচিত মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এই মাসে বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ার কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ হওয়া। এই মার্কেটে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার শ্রমিক যেত। তারপরও ওভারঅল এই অর্থবছরে ১২ লাখের মতো শ্রমিক গিয়েছে।

শ্রমিক কম যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিক যাওয়ার হার সবসময় বেশি থাকবে তা কিন্তু নয়। এটা কোনো মাসে বাড়বে, আবার কোনো মাসে কমবে। তিনি বলেন, শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের পাশাপাশি অ্যাডিশনাল হিসেবে ইউরোপের মার্কেটও খোলার ব্যবস্থা করা দরকার আমাদের। এর মধ্য ইউরোপগামীদের ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য ঢাকায় কোনো ভিসা সেন্টার নাই। এই ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য ভাষা দক্ষতার ওপর আরো বেশি জোর দেয়া উচিত বলে আমি মনে করছি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত (১-২৬ জুন) বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, লেবানন, জর্দান, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ইতালি, জাপান, কানাডা, সিসিলি, চীন, সোমালিয়া, ফিজিসহ মোট ৪৫ দেশে ৫ লাখ ৯৮১ জন শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছে। গত বছরের এই সময়ে সাড়ে ছয় লাখ শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জুন মাসে পাড়ি জমায় ৪৭ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্য সর্বোচ্চ সৌদি আরবে গিয়েছে ২৫ হাজার শ্রমিক। কিন্তু এক মাস আগে অর্থাৎ মে মাসে বিদেশে শ্রমিক গিয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৯১ জন। মাসিক তুলনামূলক হিসাব করলে এক মাসের ব্যবধানে ৮৪ হাজার ৫৫৮ জন শ্রমিক বিদেশে কম গিয়েছে।
জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃত্ত একাধিক ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, আমাদের সৌদিগামী বহু শ্রমিকের ভিসার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে থাকলেও শুধু সত্যায়ন জটিলতার কারণে অনেক শ্রমিকের বিদেশ যাত্রা আটকে আছে। এ নিয়ে বায়রার নেতৃবৃন্দ আমাদের প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের সাথে বৈঠক করেছেন। পরে এ নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে সত্যায়ন ছাড়াই বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনো সত্যায়ন ছাড়া বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি বলে শুনেছি।
এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান অণুবিভাগ) নূর মো: মাহবুবুল হকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। একইভাবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) ছাদেক আহমদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও সাড়া দেননি।

এই প্রসঙ্গে অবশ্য বায়রার নির্বাচিত মহাসচিব দাবিদার শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান নয়া দিগন্তকে বলেন, সৌদি আরব হচ্ছে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় শ্রম মার্কেট। এই মাসে দেশটিতে কর্মী অনেক কম গেছে।
সত্যায়ন না থাকার কারণে অনেক শ্রমিকের বহির্গমন ছাড়পত্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিএমইটি আটকে রেখেছে, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সত্যায়ন সৌদিগামী কর্মীর চাকরি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কিনা? আর দূতাবাসের সত্যায়নের সাথে কর্মীর স্বার্থের বিষয় আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে প্রয়োজন কোথায় বলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন?
এর আগে একাধিক বায়রা নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমবাজারের অবস্থা মোটেও ভালো না। একের পর এক দেশের শ্রম বাজার বন্ধ হচ্ছে। এতে আমাদের এই পেশায় টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবসাটা সহজ করার পরিবর্তে একেক সময় একেক আইন করে জটিল করা হচ্ছে। ‘এ ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী কিছুটা আন্তরিক হলেও কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন আমাদের সচিব মহোদয়।’
কাকরাইল এলাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গত সোমবার রাতে তার অফিসে এ প্রতিবেদককে আক্ষেপ করে বলেন, সৌদি আরবে সত্যায়ন জটিলতায় শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। টিকিটের সময় পার হয়ে গেছে। বলেছে, আজ থেকে দেয়া শুরু হবে। কিন্তু দিচ্ছেন না ডাইরেক্টর সাব।
তিনি প্রশ্ন রেখে জানতে চান, ইউরোপে পাঁচ হাজারের মতো কর্মী গেছে সত্যায়ন ছাড়াই। কেউ কি শুনেছেন একজন কর্মীও দেশে ফেরৎ এসেছেন। তারপরও তারা এখন ইউরোপগামীদের জন্যও সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কিভাবে ব্যবসা করব? তারা ইউরোপের ভিসা সংগ্রহ করে আনুক তো আগে। তখন বুঝবে একটা ভিসা সংগ্রহ করা কী কঠিন কাজ?


আরো সংবাদ



premium cement