১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে গোলামির চুক্তি করেছে

সেমিনারে নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের সেমিনারে আলোচকরা : নয়া দিগন্ত -

দেশের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সাথে ১২০টি গোলামির চুক্তি করেছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে ভারত লাভবান হচ্ছে কিন্তু আমাদের দেশের জনগণের কোনো লাভ হচ্ছে না।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গভর্নেন্স অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ-জিপিআরের উদ্যোগে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরায় ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আব্দুর রব, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব: জহুরুল আলম, গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও কর্নেল অব: মিয়া মশিউজ্জামান, এম মোজাহেরুল হক, মেজর অব: মোহাম্মদ ইমরান, মেজর অব: ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম, কর্নেল অব: আবু ইউসূফ যোবায়ের উল্যাহ, লে. কর্নেল অব: দিদারুল আলম, লে. কর্নেল অব: নাজমুল ইসলাম, মেজর অব: মো: ইমরান, পাক্ষিক পার্বত্যনিউজের সম্পাদক ও সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ, মানবাধিকারকর্মী নুরুল হুদা মিলু, আরিফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তারেক আবদুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম মির্জা, কর্নেল অব: নাজিবুল ইসলাম প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কর্নেল অব: মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসি। কুরআন তিলাওয়াত করেন কারি মমিনুল ইসলাম।
বিচারপতি আবদুর রউফ বলেন, বাংলাদেশে যেমন অবক্ষয় হয়েছে, তেমনি সারা বিশ্বেও অবক্ষয় হয়েছে। এই অবক্ষয় থেকে বুলেট ও ব্যালটের দ্বন্দ্ব শুরু। এরপর শুরু হয় মাদকের ভয়াবহতা। আজ দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে যড়যন্ত্র চলছে সেভেন সিস্টারে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। এ অবস্থা চললে পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বে অব বেঙ্গল ভবিষ্যতে ল্যান্ড হিসেবে প্রকাশ পাবে। ভারতকে যে ট্রানজিট দিয়েছে তাতে আমাদের লাভবান হওয়ার সুযোগ খুব কম। আমাদের দেশে সাগর অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা কম হচ্ছে।
ড. আব্দুর রব বলেন, সাংবাদিকরা আজ সত্য বলতে ও লিখতে পারছে না। অনেক সাংবাদিক খুন হয়েছে সত্য বলার জন্য। দেশের স্বাধীনতার জন্য আইনের শাসনের জন্য যারা কথা বলছে তাদেরকে গুম খুনের শিকার হতে হচ্ছে। দেশের সম্মানিত আলেমরা আজ জুলুম নির্যাতনের শিকার। আলেমদেরকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে কোর্টে নেয়া হচ্ছে। এখনো দেশের লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে দিন যাপন করছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশের ২২ কিলোমিটার ট্রানজিট করিডোর দিচ্ছে না ভারত, ভুটানের সাথে ৩৫ কিলোমিটারের ট্রানজিট করিডোরও দিচ্ছে না ভারত। অথচ ৮৬১ কিলোমিটার রেল করিডোর ভারত ব্যবহার করবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে সব দিয়ে দিচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের দেশে ভোটের পার্সেন্টেজ আওয়ামী লীগের ৩৪ শতাংশ, বিএনপির ২৮ শতাংশ আর জামায়াতের ১২ শতাংশ। ভোটের মাঠে ১২ শতাংশ জামায়াতের ভোট বিএনপির সাথে যোগ হলেই বিএনপি জিতে যায়, এ দেশের দেশপ্রেমিক জনগণ জিতে যায়।
মূল প্রবন্ধে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক কর্নেল অব: মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসি বলেন, ছাত্র রাজনীতি নামে অপরাজনীতি চালু করে বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আইনের শাসনের নামে দেশের জনগণ আজ নিষ্পেষিত অবহেলিত লাঞ্ছিত। দেশে আজ কোনো জবাবদিহিতা নাই, জনগণের ভোটাধিকার নাই। জনগণের আজ বাকস্বাধীনতা নাই, মৌলিক অধিকার নাই। পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা থেকে বাংলাদেশের মানুষের ধর্ম ইতিহাস ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক কৃষ্টি সব কিছু বাদ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে মুসলমানদেরকে বলা হচ্ছে যে আমরা বহিরাগত, অথচ বাংলাদেশের মুসলমানরাই এ দেশের আদি অধিবাসী ও আদি ভূমিপুত্র। তিনি আরো বলেন, নেহরু ডকট্রিন ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করেছে। উপমহাদেশে ভারত এককভাবে আধিপত্যবাদী শাসন কায়েম করতে চায়।
মেজর অব: মোহাম্মদ ইমরান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে। অথচ ভারত আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নাই, তখন পানি ছেড়ে দিয়ে সারা দেশকে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে। ভারতের আগ্রাসন থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে।
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আজকে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবর্তে সামাজিক অনাচার শুরু হয়েছে। ভারতের সাথে রেল চুক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে চুক্তি। আজ অবৈধ সরকার দিল্লির গোলামি করছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। ভারতই ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টি করে আজকে বাংলাদেশের অবস্থা তৈরি করে। স্বৈরাচারী আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সাথে ১২০টি চুক্তি হয়েছে। দেশকে রক্ষা করতে হলে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
কর্নেল অব: দিদারুল আলম বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ তাদের চুক্তিও অবৈধ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থেকে টিকে থাকার জন্য ১২০টি চুক্তি করেছে। আমাদের দেশের ভিতর দিয়ে ভারতের রেল যেতে দেবো না।
সভাপতির বক্তব্যে ইকতেদার আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে। ১৮ সালের নির্বাচন দিনের ভোটার রাতে দেয়া হয়েছে। ২০২২ সালে নির্বাচনের ৯০ শতাংশ জনগণ অংশগ্রহণ করেনি এবং একটি ডামি ডামি খেলার মাধ্যমে নির্বাচন করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে। এই ভোটারবিহীন নির্বাচনের সূত্রপাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার কারণে হয়েছে। মুন সিনেমা হলের মামলাকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মধ্যে ডাইভার্ট করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার ক্ষমতায় আছে। দেশের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জামায়াতের ভোটের পার্সেন্টিজ বাড়বে। দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement