১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে আরো ২৫০ কোটি টাকা

নদীশাসনে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯,৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা
-

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে আরো প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। মূলত পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদীশাসনের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যকালও বেড়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ায় নদীশাসন কাজে ব্যয় বাড়ছে ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এটি নদীশাসন কাজের মূল চুক্তি মূল্যের প্রায় ১৩ শতাংশ।
আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু নদীশাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন (এসএইচসিএল)। নদীশাসন কাজের প্রথম সংশোধিত চুক্তিমূল্য অনুযায়ী এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদিত হলে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ চলতি ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের নদী শাসনে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ৩০ জুন। তবে প্রকল্পের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড চলতি ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র মতে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন কাজের মূল চুক্তিমূল্য ছিল আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। যা গত ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় নদীশাসন কাজের প্রথম সংশোধিত চুক্তিমূল্য ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, নদীশাসন কাজ বিলম্বিত হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ের জন্য চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ দাবি করে চিঠি দেয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিল করা দাবিগুলো মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কনস্ট্র্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট কর্তৃক পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
সূত্র মতে, নদীশাসন কাজে ঠিকাদারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার দু’টি কারণে এক্সটেনশন অব টাইম দাবি করেছে। প্রথমত প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তের নদীশাসন কাজের সীমানায় অবস্থিত কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট, লঞ্চ ঘাট, স্পিডবোট ঘাট ও আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে এলাকা নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে বিআইডব্লিউটিএ’র দখলে থাকায় ঠিকাদারকে জমি হস্তান্তরে প্রায় তিন বছরের বেশি (২০২৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত) দেরি হয়।
দ্বিতীয়ত, নদীশাসন কাজের ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পর মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর উজানে নদীশাসন কাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে নদীর প্রচণ্ড স্রোতে নদীভাঙন হয়ে ঠিকাদারের কাজের কিছু এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে ওই ভাঙনের শিকার এলাকার নদীর তলদেশের গভীরতা লেভেল দাঁড়ায় (-) ৩৩ মিটার পিডব্লিউডি। নদীশাসন কাজের ডিজাইন অনুযায়ী অ্যাপ্রনের লেভেল (-) ২৫ মিটার পিডব্লিউডি। নদীর তলদেশে গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোপূর্বে সম্পাদিত ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে, পরিবর্তিত ডিজাইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। সৃষ্ট গভীরতা প্রকৃতিগতভাবে ভরাট হতে কয়েকটি বর্ষা মৌসুমের প্রয়োজন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তত নতুন ডিজাইন প্রণয়নে বিলম্ব হয়।
সূত্র জানায়, এর আগে বিলম্বের জন্য চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ৬৯০ দিনের (বিলম্বে জমি হস্তান্তরের জন্য ৫১০ দিন এবং বিলম্বে ডিজাইন প্রণয়নের জন্য ১৮০ দিন) অর্থ দাবি করেছে। এক্সটেনশন অব টাইম এবং বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য ডেইলি ম্যানেজমেন্ট কষ্ট বাবদ প্রতিদিন ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৪৭১ দশমিক ৫৮ টাকা হারে ৬৯০ দিনের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যতীত মোট পাওনা দাঁড়ায় ২৬৩ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
পরবর্তীতে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দাবিকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। ফলে, ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া চূড়ান্তভাবে দাবি দাঁড়িয়েছে ২৩৭ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৭২ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
জানা গেছে, সংশোধিত চুক্তিমূল্যের বিপরীতে সম্পাদিত কাজে মোট ২৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এমতাবস্থায় নদীশাসন কাজের সংশোধিত চুক্তিমূল্য দাঁড়াচ্ছে সর্বমোট ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement