১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হেলিকপ্টার নিয়ে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে ডিবির অভিযান ২ আসামি গ্রেফতার

এমপি আজিম হত্যা
-

খাগড়াছড়ির পাহাড় থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী। গতকাল বুুধবার তাদের ধরতে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেখান থেকে এই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ডিবি জানিয়েছে। দুই আসামিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতায় খুন করে ১৯ মে দেশে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজী। এর পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।
গত ১৩ মে কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে খুন হন আনোয়ারুল আজিম। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ জানায়, এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী। তারা খুনের আগে গত ২ মে কলকাতায় গিয়েছিলেন। এরপর ২১ মে সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় দেশে শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান গ্রেফতার হলে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল আত্মগোপনে চলে যান।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, আনোয়ারুল আজিম খুনের খবর প্রকাশের পর থেকেই ক্রমাগত অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে এই দু’জনের অবস্থানের কথা জানা যায়। পরে ডিবির একাধিক দল হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযানে যুক্ত হয়। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদও হেলিকপ্টারযোগে খাগড়াছড়িতে যান।
ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হন এমপি আনার। তার লাশ খণ্ডবিখণ্ড করে গুম করা হয়, এখনো যার সন্ধান মেলেনি। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচজন এবং ভারত ও নেপালে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আসামি গ্যাস বাবুর ফেলে দেয়া ফোন উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, এমপি আনার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ফেলে দেয়া মোবাইলসহ আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহে অভিযান শেষ হয়েছে। ডিএমপির উপকমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ এ অভিযান পরিচালনা করেন। ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আযমের নেতৃত্বে মাছ ধরার জেলেদের পুকুরে নামিয়ে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালীন আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ঝিনাইদহ শহর কঠোর নিরাপত্তা চাদরে ঘিরে রাখে। গ্যাস বাবুকে নিয়ে তার ফেলে দেয়া মোবাইল তিনটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বুধবার সকালে জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে আনা হয় জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে। শহরের পায়রা চত্বরের উত্তর পাশের একটি পুকুরে জেলে নামিয়ে ফেলে দেয়া মোবাইল উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক অভিযান শেষে করে পরে শহরের স্টেডিয়াম এলাকায় অন্য একটি পুকুরে অভিযান চালান তারা।
উদ্ধার অভিযান চলাকালে সেখানে অভিযানের একপর্যায়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি বলেন, এ হত্যা মামলায় মোট সাতজন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। বাকি দুইজনকে গ্রেফতারের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা সাগরে বা মাটির নিচে যেখানেই থাকুক না কেন আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। কোনো ভালো মানুষকে হয়রানি করা হবে না এবং অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

এ সময় আনার হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ডিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি) মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট ফারুক আযম, ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার আজিম উল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিনসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বুধবার (২৬ জুন) বেলা ১২টার দিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে আসেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন রাতে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে গ্যাস বাবুকে আটক করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।

 


আরো সংবাদ



premium cement