১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জল্লাদ শাহজাহান মারা গেছেন

-


আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। রোববার গভীর রাতে সাভারের হেমায়েতপুরের একটি বাসা থেকে অসুস্থ অবস্থায় শাহজাহানকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে গতকাল সোমবার ভোরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ ২৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে আলোচিত হয়েছিলেন তিনি। শেরেবাংলানগর থানার এসআই মশিউল আজম ভূঁইয়া বলেন, শাহজাহান গত ১০ জুন সাভারের হেমায়েতপুরে বাসা ভাড়া নেন রোববার রাত তিনটার দিকে বুকেব্যথা শুরু হলে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তিনি মারা যান। পোস্টমর্টেমের জন্য তার লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন শাহজাহান ভূঁইয়া। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র মামলা। এই দুই মামলায় ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে কারাগারে ছিলেন শাহজাহান। দুই মামলায় তার সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়েছিল। ওই সাজা শেষ হওয়ার পর গত বছরের ১৮ জুন শাহজাহান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ৪২ বছরের সাজার মধ্যে প্রতি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য দুই মাস কারা রেয়াত পেয়েছিলেন শাহজাহান।
কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ ও অন্যান্য কারণে সবমিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকা পয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তার দণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দিয়েছে।
কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন শাহজাহান। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি করেছিলেন।

মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছিলেন, তার থাকার কোনো জায়গা নেই। বাড়িঘর কিছুই নেই। তাই সরকারের কাছে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন শাহজাহান। তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেছিলেন প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর প্রথম ফাঁসি দেন আলোচিত একটি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে। একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সাথে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চার দিন কারাদণ্ড মওকুফ হয় বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া কারাগারে যাঁরা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন।
শাহজাহান ভূঁইয়া ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এ ছাড়া উভয় রায়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement