১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফরিদপুর রাজবাড়ী ও ভোলায় রাসেল ভাইপার আতঙ্ক

ফরিদপুরে কৃষকের মৃত্যু
-


ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও ভোলাসহ নদীতীরবর্তী চর ও চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের উপদ্রব বেড়েছে। ফরিদপুরে এই সাপের কামড়ে গতকাল এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সাপ আতঙ্কে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে কৃষিকাজের লোক মিলছে না।
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রতিটি রাসেল ভাইপার সাপ মারার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। ভোলায় গত পাঁচ দিনে ১২টি রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। এগুলোর ১১টি গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরেছেন। একটি বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফরিদপুরে রাসেল ভাইপারের কামড়ে কৃষকের মৃত্যু, পিটিয়ে মারা হলো ২টি সাপ
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের নর্থচ্যানেলের দুর্গম চরে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বিএসএমএমসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচরে গতকাল শুক্রবার ও গত বৃহস্পতিবার দুই দিনে দু’টি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেগুলো পিটিয়ে মেরেছেন গ্রামবাসী।
জানা গেছে, সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৮ দাগ এলাকায় রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ওই কৃষকের মৃত্যু হয়।

তার নাম হোসেন ব্যাপারি (৫০)। তিনি ওই এলাকার পরেশউল্লা ব্যাপারির ছেলে।
স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার হেলালউদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে হোসেন ব্যাপারিকে সাপে কামড়ায়। পরে তাকে ট্রলারযোগে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তার আগেই গতকাল শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, শুক্রবার সকালে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)।

মুরাদ মোল্লা বলেন, সকালে বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি। আগের দিন ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরো একটি রাসেল ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বলে জানান তোতা মোল্লা।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক এবং সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক প্রস্তুতি সভায় রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবে চরাঞ্চলের মানুষের উদ্বেগের বিষয়টি উল্লেখ করে রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করেন। তারা বলেন, কেউ একটি রাসেল ভাইপার সাপ মারতে পারলে তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে। যতগুলো সাপ মারবে, ততবার এই পুরস্কার দেয়া হবে।
ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া জানান, যেকোনো বন্য প্রাণী নিধন আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। রাসেল ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটি দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০ থেকে ৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সব কটি বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে এবং ব্যাঙ, ইঁদুর খেয়ে বাঁচে।

ভোলায় ৫ দিনে ১২ রাসেল ভাইপার উদ্ধার
ভোলা প্রতিনিধি জানান, ভোলায় গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এলাকাবাসী ১১টি সাপ মেরে ফেলেছেন। আর একটি সাপ বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এক রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলছে। সাপটি দেখার সাথে সাথেই এলাকাবাসী মেরে ফেলছে। একের পর এক এই সাপ উদ্ধারে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর পাংশার পদ্মার চরাঞ্চলে আতঙ্কের নতুন নাম ‘রাসেল ভাইপার’। গতকাল শুক্রবার দুপুরে পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের পদ্মার চর আফরা গ্রামে মাঠ থেকে বাদাম তুলতে গিয়ে মধু বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের শিকার হয়োছেন। তিনি এখন পাংশা হাসপাতালে চিকৎসাধীন আছেন।
এ অবস্থা দেখে ওই মাঠে কাজ করতে যাওয়া অন্যান্য কৃষিশ্রমিকরা তাৎক্ষণিক মাঠ থেকে পালিয়ে যায়। এখন বাদাম তোলার ভরা মৌসুমে
এ সাপের ভয়ে বাদাম তোলার জন্য কোনো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে জীবনের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে জমির মালিকরাই বাদাম তুলছেন।
উপজেলার হাবাসপুর, বাহাদুরপুর ও কালিকাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, জেগে ওঠা ধুধু বালুচরে বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন কিষান-কিষানিরা। মধু বিশ্বাসের সাপে কাটার খবর ছড়িয়ে পড়লে সব মাঠ থেকে সটকে পড়েন শ্রমিকরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement