১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তেল আবিবকে ঝাঁজরা করার হুঁশিয়ারি হিজবুল্লাহর

-

- ইসরাইলকে সহায়তা করলে সাইপ্রাসে হামলার হুমকি হিজবুল্লাহর
- হিজবুল্লাহর হুদহুদ ড্রোনে ইসরাইলে ব্যাপক আতঙ্ক

লেবাননের রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ বলেছে, ইসরাইল যদি সর্বাত্মকভাবে লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে তা হলে তেল আবিবের কোনো অংশ হামলা থেকে বাদ যাবে না। ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়ায় এক টেলিভিশন ভাষণে এই হুঁশিয়ারি দেন হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ। তা ছাড়া সাইপ্রাসকেও তিনি হুঁশিয়ার করে দেন। ইসরাইল লেবাননে হামলায় সাইপ্রাসের বন্দর ব্যবহার করতে পারে বলে সম্ভাবনা থাকায় এমন হুঁশিয়ারি দেন নাসরুল্লাহ। সিএনএন ও আলজাজিরা।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরাইলের সব ধরনের হুমকি মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। কোনোভাবেই তারা তেল আবিবকে ছেড়ে কথা বলবে না। হিজবুল্লাহ ইসরাইলি বন্দরনগরী হাইফার ড্রোনে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আনার পর ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। নাসরুল্লাহ বলেন, ‘শত্রুদের (ইসরাইল) জানা উচিত, তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে পুরোপুরি যুদ্ধ শুরু করে তা হলে রকেট হামলা থেকে তাদের কোনো অংশ বাদ যাবে না। হিজবুল্লাহ প্রধানের দাবি, ইসরাইল আতঙ্কে আছে। কারণ হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা উত্তর ইসরাইলের গ্যালিলিতে প্রবেশ করতে পারে। যদি আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আমরা এ কাজে দ্বিধা করবো না। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালানোর পর হামাসের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ইসরাইল সীমান্তে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর লেবানন সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। তবে এ সঙ্ঘাত এখন সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইসরাইল ও লেবানন সীমান্তের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আমোস হোচস্টেইনকে ইসরাইল ও লেবাননে পাঠান। হিজবুল্লাহর প্রচার করা ভিডিওটি দিনের বেলায় ধারণ করা হয়েছিল। ৯ মিনিটের এই ভিডিওতে সামরিক-বেসামরিক স্থাপনাগুলোর অবস্থান দেখানো হয়। এর মধ্যে আছে অস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে শপিংমল ও আবাসিক এলাকার চিত্র। এ ভিডিও প্রচারের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎজ। তিনি বলেন, ‘আমরা লেবানন ও হিজবুল্লাহর বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ধ্বংস হয়ে যাবে আর লেবানন ব্যাপক হামলার মুখে পড়বে।’

ইসরাইলকে সহায়তা করলে সাইপ্রাসে হামলার হুমকি হিজবুল্লাহর
প্রথমবারের মতো ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসে হামলার হুমকি দিয়েছেন হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ। তিনি ধারণা করছেন, সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে সাইপ্রাস দখলদার ইসরাইলি বাহিনীকে তাদের বন্দর ও ঘাঁটি ব্যবহার করতে দিতে পারে। নাসরুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, ‘লেবাননে হামলা চালানোর জন্য যদি সাইপ্রাসের বন্দর এবং ঘাঁটি ইসরাইলি শত্রুদের জন্য খুলে দেয়া হয়, এটির অর্থ হবে, সাইপ্রাসের সরকার এই যুদ্ধের অংশ এবং প্রতিরোধবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে কাজ করবে।’ সাইপ্রাস যদি ইসরাইলকে আকাশসীমা ব্যবহারের সুযোগ দেয়, তা হলে তাদেরও পরিণত ভোগ করতে হবে।
স্থানীয় সময় বুধবার টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে এই হুমকি দেন হিজবুল্লাহ সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ। লেবানিজ ও ইসরাইলি উপকূলের পশ্চিমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য সাইপ্রাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে নাসরুল্লাহ বলেন, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ইসরাইল সাইপ্রাস ভূখণ্ডে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘লেবাননে বড় যুদ্ধের ক্ষেত্রে সামরিক অবকাঠামো আক্রমণের লক্ষ্যে ইসরাইল সাইপ্রাসের বিমানবন্দর এবং ঘাঁটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, ‘লেবাননকে লক্ষ্যবস্তু করার উদ্দেশ্যে ইসরাইলিদের কাছে সাইপ্রিয়ট বিমানবন্দর এবং ঘাঁটি ব্যবহারের অর্থ হলো সাইপ্রাসের সরকারও যুদ্ধের অংশ হয়ে উঠেছে। আমরা প্রতিরোধ যুদ্ধের অংশ হিসেবে এটি মোকাবেলা করব।’

নাসরাল্লাহ আরো সতর্ক করে বলেন, ‘হিজবুল্লাহ ভূমধ্যসাগরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি নৌবাহিনী স্থাপন করবে।‘ এ দিকে কোনো ধরনের যুদ্ধে জড়িত নয় বলে দাবি জানিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাস। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহর হুমকির জবাবে সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘তার দেশ কোনোভাবেই যুদ্ধ সঙ্ঘাতে জড়িত নয়।’ বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র কোনো সমস্যার অংশ নয়। সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র সমাধানের অংশ।’
সাইপ্রাস সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, হিজবুল্লাহ প্রধানের দেওয়া বিবৃতি এবং হুমকি বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং সাইপ্রাস কখনো সামরিক সঙ্ঘাতে জড়িত ছিল না, হবেও না। সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোলাইডস বলেছেন, তার দ্বীপরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে কোনো সামরিক অভিযানে ‘কোনোভাবেই জড়িত নয়’। বৃহস্পতিবার সাইপ্রাসের মুখপাত্র কনস্ট্যান্টিনোস লেটিমপিওটিস বলেন, লেবাননের সাথে আমাদের সম্পর্ক এখনো চমৎকার। এ দিকে লেবানন থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি বলেছেন, হিজবুল্লাহ এখনো সাবধানে এগোচ্ছে। এখনো তারা ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের অলিখিত নিয়ম মেনে চলছে। সঙ্ঘাত মূলত সীমান্ত অঞ্চল এবং সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ। হাসান নাসরুল্লাহ যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, ‘হিজবুল্লাহ ইসরাইলের সাথে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। তবে তারা ইসরাইলের ভয়ে ভীতও নয়।’

হিজবুল্লাহর হুদহুদ ড্রোনে ইসরাইলে ব্যাপক আতঙ্ক
পার্সটুডে জানায়, লেবাননের হিজবুল্লাহর হুদহুদ ড্রোন ইসরাইলের অভ্যন্তরে বেশ কিছু সামরিক স্থাপনার ছবি তুলে তা প্রকাশ করায় ইসরাইলিরা ব্যাপকভাবে হতবাক ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। হিজবুল্লাহ সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার করে, যেখানে দেখানো হয়েছে ইসরাইলের আকাশে হিজবুল্লাহর হুদহুদ ড্রোন নির্বিঘেœ উড়ছে। ইসরাইলের সামরিক হুমকির জবাবে লেবাননের হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরাইলে ওই হুদহুদ ড্রোন পাঠিয়ে হাইফা বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানের ছবি তুলেছে। ইসরাইলি মিডিয়াগুলো হুদহুদ ড্রোন সম্পর্কে প্রচারিত ভিডিওকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছে। ইসরাইলি সূত্রগুলো ওই ভিডিওটিকে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে হুমকির একটি জবাব বা বার্তা হিসাবে দেখেছে। তেল আবিব যদি লেবাননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তা হলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু ছোট হবে না। ইহুদিবাদী মিডিয়াগুলো স্বীকার করেছে যে, লেবাননের হিজবুল্লাহর শক্তি ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিভাগকে হতবাক করে দিয়েছে। ইসরাইলি মিডিয়াগুলো আরো বলেছে, হিজবুল্লাহ মৃত কিংবা আহতদের ভিডিও প্রকাশ করেনি, বরং তারা তাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা দেখিয়েছে। ভিডিওটির প্রকাশকাল কাকতালীয় নয়, বরং লেবানন ও ইসরাইলে মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হোকস্টেইনের সফরকালে প্রকাশ করা হয়েছে। ইসরাইলি বিশ্লেষক ইয়োসি মেলম্যান বলেছেন, হিজবুল্লাহর কৌশলগত পরিকল্পনাকারীরা ১৮ বছরে অর্থাৎ ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর থেকে আমাদের ভূখণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের একটি বিস্ময়কর অর্জন। ভিডিও ফুটেজটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ইসরাইলের রাজনৈতিক বা সামরিক নেতৃত্ব এ সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। নবী হজরত সুলায়মান আ:-এর দরবারে ‘হুদহুদ’ নামের একটি পাখি ছিল এবং এটি আকাশে উড়ে উড়ে সুলায়মান আ:-এর জন্য নানা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে আনত। হিজবুল্লাহ যে ড্রোনটি ইসরাইলে পাঠিয়েছে সেটির নাম দৃশ্যত ওই পাখির নামে রাখা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement