প্রকাশ্যেই পুলিশের তোলাবাজি
- আবু সালেহ আকন
- ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে চার কনস্টেবলসহ সকালে ডিউটি পালন করছেন সার্জেন্ট যোবায়ের। কনস্টেবলদের মধ্যে একজন হচ্ছেন শফিকুল। গতকাল সকালে যানবাহনের কাগজপত্র চেকের নামে প্রকাশ্যে অর্থকড়ি হাতাতে দেখা যায় তাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দৈনিক বাংলা মোড়ে মাছের পোনা বোঝাই মায়ের দোয়া নামে একটি ট্রাক সিগন্যাল অমান্যের অভিযোগে কনস্টেবল শফিকুল আটক করেন। এরপর ট্রাকের কাছে এসে সার্জেন্ট যোবায়ের প্রথমে গাড়ি চালকের ছবি উঠান তার কাছে থাকা মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে। সামান্য অশ্লীল ভাষায় গাড়ি চালক এবং মাছের পোনার মালিক সুমনকে গালি দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র নিয়ে যোবায়ের চলে যান। এ সময় কনস্টেবল শফিকুল গাড়ির হেলপার ও মাছের পোনার মালিককে নিয়ে তার স্যার যোবায়েরের কাছে যান। সেখানে চলে দেনদরবারের পালা। কিভাবে টাকার অফার দিবেন এজন্য সাজের্ন্ট যোবায়ের একটু পরপর সিগারেট ফুকছিলেন। এই দৃশ্য শুধু সিসি ক্যামেরায় দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। একপর্যায়ে কনস্টেবল শফিকুলের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। অন্যথায় গাড়ি ডাম্পিংয়ে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো হয়। প্রায় ৪০ মিনিট এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি হয়। পড়ে তিন হাজার টাকায় তা সমাধান করা হয় বলে ভুক্তভোগী পোনা ব্যবসায়ী সুমন এ প্রতিবেদককে জানান। টাকা দিতে গিয়ে সুমনের দুই চোখের পানি ছলছল করছিল।
তিনি আরো জানান, একজন অপরাধী যেভাবে অপরাধ করে ভুল স্বীকার করে ঠিক আমরা ভুল না করেও হাতজোড় করে মাফ চেয়ে তিন হাজার টাকা দিতে হলো। তাদের কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন কনস্টেবল শফিকুলের মাধ্যমে সার্জেন্ট যোবায়ের। হাতেপায়ে ধরে তিন হাজার টাকা দিয়ে ছুটে যায় তারা। টাকার অঙ্ক কম হওয়ায় গাড়ি ছুটাতে একটু সময় বেশি লেগেছে।
এটাই শেষ নয়, মিনিটে মিনিটে শুধু বিভিন্ন যানবাহন ধরা হচ্ছে আর কাগজপত্র দেখার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যারা চালাক তারা গাড়ি ধরা মাত্রই কনস্টেবল শফিকুল বা অন্য তিন কনস্টেবলের হাতের মুঠোয় টাকা দিয়ে চলে যান। আর যারা একটু প্রতিবাদী তাদের মূলত কাগজপত্র দেখার নামে সময়টা বেশি লাগে। তবে শেষ তাদেরই মোটা টাকাটা গুনতে হয়।
সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা নাগাদ সার্জেন্ট যোবায়ের ও কনস্টেবল শফিকুলসহ আরো তিন কনস্টেবলকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মালবাহী ছোট ছোট ট্রাক ধরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়। দেখে মনে হচ্ছিল গাড়ি ধরার প্রতিযোগিতা চলছে। তবে চারজন কনস্টেবলের মধ্যে শফিকুল সবচেয়ে চালাক এবং চালু। তার মতো অন্য তিন কনস্টেবল দক্ষ নয়।
রাস্তায় চলাচলকারী অনেকই দাঁড়িয়ে শুধু ট্রাফিক পুলিশের এই চাঁদাবাজির দৃশ্য দেখেন। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করার মতো সাহস নেই বলে কয়েকজন ভুক্তভোগী আফসোস করেন। তাদের মতে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি কমলে রোডে জ্যামও কমে যাবে। কারণ তারা মনযোগ দিয়ে ডিউটি না করে চাঁদাবাজি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশি। এ দিকে তোলাবাজি নিয়ে সার্জেন্ট যোবায়েরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, টাকা নেয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা