ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামমাত্র পরিবর্তন : টিআইবি
অনেকাংশে অগণতান্ত্রিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নামমাত্র পরিবর্তন এনে ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) প্রণয়ন করা হয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থাটির মতে, সিএসএ নতুন মোড়কে ডিএসএর মতোই নিবর্তনমূলক, অনেকাংশে অগণতান্ত্রিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবি ও আর্টিকেল ১৯-এর যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা, ২০২৪: পর্যালোচনা ও সুপারিশ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কিছু ক্ষেত্রে ডিএসএ থেকে সিএসএতে পরিবর্তন এসেছে। তবে সেগুলো কোনো সাবস্ট্যান্টিভ পরিবর্তন নয়। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট আগে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ছিল, সেটারই নামান্তর।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিবর্তনমূলক ধারা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষের অধিকার লঙ্গন, বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মতা প্রকাশের অবারিত যে স্বাধীনতা, তা নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে দেখতে পাচ্ছি।
প্রস্তাবিত বিধিমালাটি অনুমোদনের আগে পূর্বশর্ত হিসেবে সাইবার নিরাপত্তা আইনকে ঢেলে সাজানো দরকার। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ নাগরিকসমাজ, সাংবাদিকসমাজকে সম্পৃক্ত করা অপরিহার্য। সাইবার সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ গঠন করার প্রস্তাব জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পর্যাপ্তভাবে পরিষ্কার না করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি অকার্যকর ও অপব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নামটা পরিবর্তন করেছে। ভেতরটা এক রেখে দিয়েছে। এটি ভ্রান্ত আইন দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য কোথায় আমরা কী চাইছি? আমাদের সাইবার স্পেসের নিরাপত্তা জরুরি, এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে যদি আইন করি, সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দিকেই মনোযোগী হবো। আমাদের আইন করতে হবে ধরে নিয়ে আমরা আইনটা করে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করবো। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করবো। আমরা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তে ঢুকে যেতে পারব।
সংগঠন দু’টির প্রস্তাবে জানানো হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ নিবর্তনমূলক, অনেকাংশে অগণতান্ত্রিক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়। তারা বিশ্বাস করে, মূল আইনে এ ধরনের অসংগতি রেখে অধস্তন আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য অনেকটাই নিষ্ফল হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালা ২০২৪ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সব অংশীজনের উদ্বেগ, মতামত ও পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে এবং অর্থপূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ সংশোধন করতে হবে। বিধিমালাটি আমাদের সীমিত অর্থনৈতিক, প্রাযুক্তিক সক্ষমতা এবং মানবসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পুনর্বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
টিআইবি জানায়, সাইবার নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যূনতম ব্যক্তিগত, শিক্ষাগত ও প্রাযুক্তিক যোগ্যতা বিধিমালা দিয়ে নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য বিধিমালায় আইনি কার্যবিধি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে ডিজিটাল সাক্ষ্য আদালত কর্তৃক সহজেই গৃহীত হতে পারে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির একটি কার্যকর ও অর্থপূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো থাকা দরকার বলেও মনে করে সংস্থাটি।
পর্যালোচনা ও সুপারিশে টিআইবি জানায়, নতুন ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা না করে বর্তমান ফরেনসিক ল্যাবটিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার এবং লোকবল দিয়ে সমৃদ্ধ করা উচিত। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপযুক্ত সময়ে নতুন ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা যেতে পারে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি, জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম এবং ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের কার্যক্রমে যাতে নাগরিকদের মানবাধিকার ক্ষুণœ না হয়, সে সংক্রান্ত মানবাধিকার সুরক্ষা বিধান প্রস্তাবিত বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা