ঈদের ছুটিতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে দোয়ারাবাজার
- সোহেল মিয়া দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ঈদুল আজহা আর মাত্র তিন দিন বাকি। এ উপলক্ষে ছুটি রয়েছে বেশ কয়েক দিনের। এ সময় ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির ভাণ্ডার সুনামগঞ্জের সীমান্তঘেঁষা দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট।
ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫ নম্বর সেক্টর বাঁশতলা শহীদ মিনার, স্লুইচ গেট ও জুমগাঁও, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সোনালী চেলা নদী, দোয়ারাবাজার শিশু পার্ক, শিমুলতলা, বাগানবাড়ি বর্ডার হাট ও ইছামতী নদী। বাঁশতলা স্লইচ গেট থেকে যত দূর চোখ যায় কেবল দেখা যায় ভারতের বড় সু-উচ্চ কালো পাহাড়। মাঝখানে পাহাড়ের পাথর ঘেঁষা স্বচ্ছ নীল পানি আর পাহাড় মেঘের আলিঙ্গন। শীতল পানির গন্তব্য সুরমা নদী। স্বচ্ছ নীল পানি আর পাহাড়ের সবুজ যেন মিলেমিশে একাকার। উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত বাঁশতলা।
বাঁশতলা শহীদ মিনারে তিন দিকে ভারতের কালো পাহাড়। তার মাঝখানে রয়েছে মহান মুক্তিযোদ্ধে শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর। রয়েছে শহীদের স্মৃতিগাথা শহীদ মিনার-স্মৃতিসৌধ। রয়েছে পর্যটকদের মনজুড়ানো প্রাকৃতিক নানা নিদর্শন ও গেস্ট হাউজ।
সীমান্তের পাহাড়ে বসবাস করা খারো ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এলাকা জুমগাঁও। বিশাল এক সিঁড়ি বেয়ে জুমগাঁও পাহাড়ে উঠে খুব কাছ থেকে দেখা যায় ভারতের সুবিশাল পাহাড়গুলো। এ ছাড়া জুমগাঁওয়ে পাওয়া যায় সু-মিষ্ট কমলালেবু। যার দেশব্যাপী চেলা ও ছাতকের কমলা নামে সুখ্যাতি রয়েছে। বাঁশতলা থেকে ফিরতে কলাউড়া নামক এলাকায় অবস্থিত শিমুলতলা। প্রকৃতির অঝর ভাণ্ডার শিমুলতলা ভারতের তারকাঁটা বেড়ার সন্নিকটে অবস্থিত।
এখানে রয়েছে বিস্তৃত বালুচর। খেজুর আর তালগাছের সমারোহ। শীতের মৌসুমে খেজুর আর তালের রস খেতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
উপজেলা সদরে অবস্থিত দোয়ারাবাজার শিশু পার্ক। নবনির্মিত এই শিশু পার্কটি ভ্রমণপিপাসুদের আমন্ত্রণ জানাতে নান্দনিক রূপে সাজানো হয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত শিশু পার্কটি দেখলে যে কারো মনে জুড়িয়ে যায়। এর উত্তর দিকে সুরমা নদী পার হয়ে যেতে হয় বাগানবাড়ি বর্ডার হাটে। উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত বাগানবাড়ি বর্ডার হাট সপ্তাহে দু’দিন ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এখান থেকে দেশী-বিদেশী নানা পণ্য কিনতে দু’দেশের মানুষের উপস্থিতি এক মেলবন্ধনে পরিণত হয়।
সোনালী চেলা নদী : উপজেলা সদর ও বাংলাবাজার ইউনিয়নের পূর্ব দিকে নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবহমান ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর পাহাড়ি খরস্রোতা নদী সোনালী চেলা। ভারতের চেলা নামক জায়গার নামানুসারে এই নদীর নাম রাখা হয়েছে চেলা নদী।
১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই নদীটি ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষায় উত্তাল তরঙ্গ আর শুষ্ক মৌসুমে বিশাল বালুচর। সোনালী চেলা নদীর উত্তরে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের সু-উচ্চ কালো পাহাড়। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি এই নদী দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বুকচিরে সুরমা নদীতে গিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পরন্ত বিকেলে চেলা নদীর নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। আবার ভোরে পাহাড়ি পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ এবং বালু-পাথরে ঘর্ষণ আর নৌকার বৈঠার আওয়াজে ঘুম ভাঙে এই এলাকার বাসিন্দাদের।
সোনালী চেলা নদীর বালুচরে বসে খুব কাছ থেকে মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যায়। পানির শব্দে ঘুম আসে। পাহাড় শুধু নয়, আছে অগণিত বালু-পাথর। চেলা নদী দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় চুনাপাথর, যা ঐতিহ্যবাহী ছাতক সিমেন্টে ব্যবহার করায় এই সিমেন্টের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু-পাথরে কর্মব্যস্থতায় আয় রোজগার করে ছাতক-দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার মানুষজন।
ইছমতী নদী : সোনালী চেলা নদীর পূর্ব দিকে অবস্থিত উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়িয়া এই নদীটির নামকরণ করা হয়েছে ভারতের ইছমতী এলাকার নামে। ইছামতী নদী দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয় চুনাপাথর। আমদানিকৃত এই চুনপাথরে দু’দেশের মানুষের কর্মচাঞ্চল্যে এক নিবিড় সম্পর্ক দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এই চুনাপাথর ছাতক সিমেন্ট তৈরিতে ও ব্যবহৃত হয়।
এই নদীর নামের সাথে মিল রেখে ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশে নদীকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দু’টি ইছমতী বাজার।
এই পর্যটন স্পটগুলোতে আসতে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রথমে উপজেলা সদরে শিশু পার্ক, পরে বাঁশতলা হয়ে সোনালী চেলা নদী ও ইছামতী এলাকায় যেতে হবে। আবার ছাতক উপজেলা থেকে আলাদা আলাদা রাস্তা ব্যবহার করেও এই পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়া যাবে। দিনরাত ঢাকা-সিলেট-সুনামগঞ্জ বাস চলাচল করে। সুবিধামতো সময়ে হানিফ, ইউনিক, এনা, এনপি কিংবা শ্যামলী পরিবহনের বাসে চেপে বসলেই হবে। বাসে সুনামগঞ্জ অথবা ছাতকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আসা যায় অতি সহজে। ছাতক বাজার আসার পর সুরমা নদী পার হয়ে পশ্চিমের দোয়ারা সদরে শিশু পার্ক, সোজা উত্তরে বাঁশতলা, সোনালী চেলা, ইছমাতী এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অথবা মোটরসাইকেল চেপে সরাসরি আসা যায়। তা ছাড়া মাইক্রোবাস করেও যেতে পারবেন এই অঞ্চলগুলোতে। ছাতক থেকে সুরমা নদী পার হয়ে এই পর্যটন স্পটগুলোতে ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় ৩০ মিনিটেই আসা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা