গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরাইল : জাতিসঙ্ঘ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৩ জুন ২০২৪, ০১:৪৮
জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে গাজাযুদ্ধের প্রথম দিকেই ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করেছে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, শুধু যুদ্ধাপরাধ নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধও করেছে ইসরাইল। কারণ তাদের হামলায় বেসামরিক অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছেন। দুইটি রিপোর্টের মাধ্যমে গাজাযুদ্ধের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে, একটিতে ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। অন্যটিতে গাজায় ইসরাইলি হামলার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
তদন্ত কমিশন আরও জানায়, ইসরাইল তাদের কাজে বাধা দিয়েছে। গাজায় প্রবেশের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তেলআবিব প্রশাসন। জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মিশনে নিযুক্ত ইসরাইলি কূটনীতিক জাতিসঙ্ঘের তদন্ত কমিশনের এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এই রিপোর্টকে ইসরাইলবিরোধী রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা বলেও আখ্যা দিয়েছেন। এ বিষয়ে হামাস তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
রিপোর্টে গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত যুদ্ধকে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের নির্যাতন, খুন ও আত্মহত্যা, ব্যক্তিগত মর্যাদার ওপর আক্রোশ এবং অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের চিত্র উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইল কেবল গাজাবাসীদের খাদ্য, পানি, আশ্রয় ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় সাহায্য সরবরাহ করতেই ব্যর্থ হয়নি, বরং অন্য কারো দ্বারা সেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহে বাধা দেয়ার চেষ্টাও করেছে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার ওপর ৫৯ পৃষ্ঠার রিপোর্টে প্রাপ্ত ফলাফলগুলোর মধ্যে কমিশন পাবলিক শেল্টারে হত্যার চারটি ঘটনা যাচাই করেছে। সেখানে উঠে এসেছে হামাসের অভিযানের নির্দেশনার পরিকল্পনা।
১২৬ পৃষ্ঠার গাজা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইল যে এমকে-৮৪ নামের ধ্বংসাত্মক বোমার ব্যবহার করছে, তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ এসব অস্ত্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামরিক লক্ষ্যবস্তু ও বেসামরিক বস্তু আলাদা করতে পারে না। রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়েছে। একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, ‘তাদের (ফিলিস্তিনিদের) মানসিকভাবে হেনস্তা করার জন্য জনসমক্ষে নগ্ন হতে বাধ্য করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’ জাতিসঙ্ঘে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান নাভি পিলেসহ তিনজন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত সিওআই ২০২১ সালে জেনেভা কাউন্সিল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। আগামী সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে।
কাতারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গতকাল বুধবার দোহায় মূল মধ্যস্থতাকারী কাতারের সাথে আলোচনার জন্য গিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসকে চাপ দিতে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশের সফরের মধ্যে ব্লিনকেন কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে বৈঠক করছেন। হামাস তাদের বার্তা কাতারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।
আলোচনার সাথে সম্পর্কিত একটি সূত্র জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ৩১ মে গৃহীত পরিকল্পনার বিষয়ে হামাস মঙ্গলবার দিনের শেষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধবিরতির সময়সীমা সম্পর্কিত সংশোধনীসহ হামাস মঙ্গলবার তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বাইডেনের পরিকল্পনায়, জনসংখ্যাপূর্ণ প্রধান এলাকা থেকে ইসরাইলি সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে ছয় সপ্তাহের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, আলোচকরা একটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধবিরতির এই মেয়াদ আরো বাড়ানো হবে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজ বলেছে, তারা হামাসের বক্তব্য ‘মূল্যায়ন’ করছে। মার্কিন কর্মকর্তারা আশা করেছিলেন, অবিলম্বে সম্পূর্ণ চুক্তি গ্রহণ করার পরিবর্তে হামাস অন্তত কিছু পরিবর্তনের জন্য জোর দেবে। সেখানে ইসরাইলের সাথে পার্থক্য দূর করার জন্য যথেষ্ট সাধারণ ভিত্তি আছে কিনা সেটা দেখতে চান। বেসামরিক নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ক্ষতির কারণে বাইডেন এমন একটি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে আগ্রহী।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাসের দাবি
হামাস গত মঙ্গলবার রাতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে পাঠানো জবাবে কিছু শর্ত দিয়েছে। তারা বলেছে- স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কবে হবে সেই তারিখ আগেই নির্ধারণ করে দিতে হবে। অর্থাৎ অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরু হবে এরপর কথিত আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো হবে না এমন কোনো কিছু তারা মানবে না।
তারা আরো শর্ত দিয়েছে- গাজা থেকে ইসরাইলের সব সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এমনকি গাজা ও মিসরের সীমান্তবর্তী রাফা থেকেও ইসরাইলি সেনাদের সরে যেতে হবে। হামাস আরেকটি প্রধান শর্ত দিয়েছে। সেটি হলো- যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজাকে পুনর্গঠিত করে দিতে হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।
দখলদার ইসরাইলের হামলায় গাজার বেশির ভাগ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন সেগুলোতে মানুষের বসবাস করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ইসরাইলের কারাগারে বন্দী থাকা ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারেও শর্ত দিয়েছে হামাস। তারা বলেছে, ইসরাইলের কারাগারে যেসব ‘হাইপ্রোফাইল’ বন্দী রয়েছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে ইসরাইল কোনো আপত্তি করতে পারবে না। যার অর্থ হামাস যে বন্দীকে চাইবে সেই বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। হামাসের এসব দাবি ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেটি থেকে হামাস প্রধান বিষয়গুলো পরিবর্তন করে ফেলেছে।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আবারো বিক্ষোভ
এ দিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভকারীরা আবার ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা করলে পুলিশ তা ভণ্ডুল করে দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা এপি জানায়, বিক্ষোভকারীদের আক্রমণের পরে আগে স্থাপন করা শিবিরটি উচ্ছেদ করেছে কর্মকর্তারা। ইউসিএলএ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অ্যাসিসট্যান্টট ভাইস চ্যান্সেলর রিক ব্রাজিয়েল এক বিবৃতিতে বলেন, সোমবার রাতে বিক্ষোভের সময় কর্মকর্তারা ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছেন।
ইউসিএলএ পুলিশ জানিয়েছে, এই বিক্ষোভকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেছেন এবং একজন কর্মকর্তার কাজে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তাদের ইউসিএলএ থেকে দূরে থাকতে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছিল এবং তারপরে ছেড়ে দেয়া হয়। ব্রাজিয়েল বলেন, গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ করা এবং ফাইনাল বা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারাও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে বারবার তাবু ও ছাউনি স্থাপন ও বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এর ফলে আশেপাশের চূড়ান্ত পরীক্ষা পরিচালনা ব্যাহত হয়।
পুলিশ বলছে, আন্দোলনকারীরা একটি ফোয়ারা, স্প্রে-পেইন্ট ইটের ওয়াকওয়েগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অগ্নি সুরক্ষা সরঞ্জামগুলোতে হস্তক্ষেপ করেছে, প্যাটিওর আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বৈদ্যুতিক ফিক্সচার থেকে তার ছিঁড়েছে এবং যানবাহন ভাঙচুর করেছে। ব্রাজিয়েল জানান, বিক্ষোভ চলাকালীন এমন হামলাও হয়েছিল যার ফলে ছয়জন ইউসিএলএ পুলিশ আহত হয়েছে। পাশাপাশি একজন নিরাপত্তা প্রহরী মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রক্তক্ষরণও হয়েছে। বিবৃতিতে ব্রাজিয়েল বলেন, ‘সহজভাবে বলতে গেলে, সহিংস প্রতিবাদের এই কাজগুলো ঘৃণ্য এবং এটি চলতে পারে না।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতিবাদ শিবির গড়ে উঠেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ইসরাইল বা এর যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে এমন সংস্থাগুলোর সাথে ব্যবসা করা বন্ধের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আয়োজকরা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধকে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জোরদার করার চেষ্টা করছে। বিক্ষোভের কারণে ইউসিএলএ বারবার উত্তাল হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে।
এক পর্যায়ে, ফিলিস্তিনপন্থী একটি শিবিরে ইসরাইলপন্থীরা পাল্টা আক্রমণ করেছিল। এতে পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শিবিরটি উচ্ছেদ করার সাথে সাথে কয়েক ডজন লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই ঘটনা ক্যাম্পাস পুলিশ প্রধানকে পুনরায় নিযুক্ত এবং একটি নতুন ক্যাম্পাস সুরক্ষা অফিস তৈরির দিকে পরিচালিত করে। পরে নতুন বিক্ষোভ শিবির স্থাপনের প্রচেষ্টাও ভণ্ডুল করে দেয়া হয়। ইউসিএলএ সোমবারের প্রতিবাদটি শুরু হয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া রিজেন্টদের আসন্ন সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের ঠিক কয়েক দিন আগে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা