সেন্টমার্টিনগামী বোটে ফের মিয়ানমার থেকে গুলি : চলাচল বন্ধ
- উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
- ১২ জুন ২০২৪, ০২:০৬
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট নামে পরিচিত। আর সেই পয়েন্টে অবস্থান নেয় মিয়ানমারের অজ্ঞাত একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীটি কোনোভাবেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার বা স্পিড বোট চলাচল করতে দিচ্ছে না। ওই রুটে ট্রলার বা বোট দেখার সাথে সাথেই তারা গুলি করছে। টানা ৭ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার পাঁচজন যাত্রী নিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী একটি স্পিড বোটকে লক্ষ করে ফের গুলিবর্ষণ করেছে সন্ত্রাসীরা। তবে এতে কেউ হতাহত না হলেও দ্বীপজুড়ে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দ্বীপবাসীর খাদ্য সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। গতকাল আক্রান্ত স্পিড বোটটির মালিক সেন্টমার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য জরুরিভাবে টেকনাফে আসা পাঁচ যাত্রীর সেন্টমার্টিন যাওয়ার প্রয়োজন হলে চালক মোহাম্মদ বেলাল সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট থেকে যাত্রা করে। বোটটি শাহপরীর দ্বীপ অতিক্রম করে নাফনদের বদরমোকামের গোলগরা পয়েন্টে পৌঁছে। এটি নাইক্ষ্যংদিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের অংশ। কিন্তু এরপরও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে এসে গুলি করে। টানা ১০-১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। চালক বেলাল অবস্থা বুঝে বোট দ্রুত চালিয়ে পশ্চিমের বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যায়। বোটটি দুপুর ১২টার দিকে দ্বীপে গিয়ে পৌঁছে। দ্বীপের এই জনপ্রতিনিধি জানান, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস বোটে যাত্রী বা পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা রয়েছে। ট্রলারগুলিকে নাফনদ এবং বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানামরের কাছাকাছি এলাকা অতিক্রম করতে হয়। এটা করতে গিয়ে ৫ জুন সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। এরপর ৮ জুনও পণ্যবাহী ট্রলারে আবারো গুলি করে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে ৭টি। কিন্তু স্পিড বোট অনেক দূর থেকে চলাচল করলেও কেন বাংলাদেশের জলসীমায় এসে গুলি করছে বোঝা যাচ্ছে না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, টেকনাফের নাফনদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটি নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারে অবস্থানরত অস্ত্রধারী কারা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফনদে টহল দিচ্ছে। আর কোনোভাবেই ট্রলার বা স্পিড বোট দেখলেই গুলি করছে। মঙ্গলবার ঘটনার পর দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেন্টমার্টিন টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ। যার কারণে দৈনন্দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সঙ্কট হতে শুরু করেছে। সমাধান না হলে দ্বীপবাসীর অবস্থা খুব সঙ্কটাপন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করে নৌবাহিনী বা কোস্ট গার্ডের জাহাজযোগে খাদ্যপণ্য নেয়ার দাবি জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো: আদনান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন বলেন, গুলি ছোড়ার ঘটনায় ওই নৌরুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার বিষয় চিন্তা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে গত রোববার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়েছে। এখন সেন্টমার্টিনে পণ্য পাঠানোর জন্য বঙ্গোপসাগরই ভরসা কি না দেখা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা