গাজায় জাতিসঙ্ঘের স্কুলে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪০
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের যৌথ বিবৃতি
- গাজাযুদ্ধে ৬৪৫ ইসরাইলি সেনা নিহত
- আইসিজের মামলায় যোগ দেয়ার ঘোষণা স্পেনের
- গাজার সব মানুষকে হত্যা করতে চায় ইসরাইল : পুতিন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাতিসঙ্ঘের একটি স্কুলে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা স্কুলটিতে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছিল বলে গাজার গণমাধ্যম জানিয়েছে। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে হামাস ও জাতিসঙ্ঘ। তা ছাড়া বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাদজা লাহবিব জাতিসঙ্ঘের স্কুলে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। আলজাজিরা, রয়টার্স, এএফপি ও টাইমস অব ইসরাইল।
অপর দিকে ইসরাইলের দাবি, স্কুলটিতে হামাসের একটি কম্পাউন্ড ছিল, সেখানে হামলা চালিয়ে ৭ অক্টোবরের হামলার সাথে জড়িত যোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে; যে হামলাটি আট মাস ধরে চলা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। মধ্য গাজার নুসেইরাতে জাতিসঙ্ঘের ওই স্কুলে হামাসের একটি লুকানো কমান্ড পোস্ট ছিল, ইসরাইলের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার তথ্য দফতরের পরিচালক ইসমাইল আল-ছাওয়াবেত।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, দখলদাররা কয়েক ডজন বাস্তুচ্যুত মানুষের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দিতে মিথ্যা বানানো গল্পের মাধ্যমে জনমতের কাছে মিথ্যা কথা বলে। ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধ বিমানগুলোর হামলার আগে ইসরাইলে সামরিক বাহিনী বেসামরিকদের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইসরাইল গত বুধবার গাজার মধ্যাঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে একটি নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে, এখানেই বিমান হামলায় বহু লোক নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মীরা জানিয়েছেন।
হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড এবং ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, বুধবার তারা পুরো গাজাজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীগুলোর সাথে বন্দুক লড়াই করেছে আর শত্রুদের অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ট্যাংক বিধ্বংসী রকেট ও গোলা ছুড়েছে। বুধবার গাজার মধ্যাঞ্চলীয় দিয়ের আল-বালাহর শুহাদা আল আকসা হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় যারা নিহত হয়েছে তাদের মধ্যে দু’টি শিশু আছে। শিশু দু’টি তাদের মাসহ নিহত হয়েছে। গাজায় যে দু’টি হাসপাতাল এখনো সচল আছে এই শুহাদা আল-আকসা তার একটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার সময় অনেকে পালাতে পারলেও ওই মা ও শিশু দু’টি পালাতে পারেনি। শিশু দু’টির বাবা আবু মোহাম্মদ আবু সাইফ বলেন, এটি যুদ্ধ না, এটি ধ্বংস যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ইসরাইল জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলাকালে লড়াইয়ে কোনো বিরতি দেয়া হবে না।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে যৗথ বিবৃতি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্পেন, থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের নেতাদের সর্মথিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিমুক্তি চুক্তির অংশ হিসেবে তারা গত ৩১ মে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেয়া রূপরেখা সম্পূর্ণ সমর্থন করে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ইসরাইল চুক্তি মেনে নিতে প্রস্তুত এবং হামাসকে এটি মেনে নেয়ার ও বন্দীদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।
৬৪৬ ইসরাইলি সেনা নিহত
গাজাযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬ শতাধিক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। সবশেষ দক্ষিণ গাজা সীমান্তে এক ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজার দক্ষিণ রাফাহ জেলার কাছে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ওই সেনার নাম ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন ৩৪ বছর বয়সী মেজর জিদ মাজারিব, গাজা বিভাগের দক্ষিণ ব্রিগেডের একজন ট্র্যাকার। টাইমস অব ইসরাইলের মতে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডের দিকে অগ্রসর হওয়া ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সাথে গুলিবিনিময়ের সময় ওই সৈনিক মারা যায়। সেনাবাহিনীর মতে, বিনিময়ে তিন ফিলিস্তিনিও নিহত হয়েছে।
আইসিজেতে যোগ দেবে স্পেন
গাজা উপত্যকায় গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্পেন। এর আগে ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার করা সেই মামলায় যোগ দেয়ার ঘোষণার কথা জানিয়েছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস। স্পেনের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড, চিলি ও মেক্সিকো ওই মামলায় যোগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
ইসরাইলের আয়রন ডোম লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর হামলা
টাইমস অব ইসরাইল জানায়, লেবাননের রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহ দাবি করেছে যে, তারা ইসরাইলের আয়রন ডোম বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের থউত্তরাঞ্চলে ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অবস্থান। একটি ফুটেজে দেখা গেছে যে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র আয়রন ডোমে আঘাত হানছে। উত্তর ইসরাইলের রামোত নাফতালি শহরের কাছেই আয়রন ডোম অবস্থিত। এই হামলায় তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছু জানায়নি ইসরাইলি বাহিনী।
লোহিত সাগরে গ্রিসের জাহাজে হাউছিদের হামলা
আলজাজিরা জানায়, ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে গ্রিসের মালিকানাধীন একটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। ব্রিটিশ নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগেও লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জাহাজটি ভারতের মুরমুগাও থেকে মিসরের সুয়েজ খালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তবে জাহাজটির নাম না জানিয়ে অ্যামব্রে বলছে, এটি পূর্ব আফ্রিকার ইরিত্রিয়া থেকে ১১৮ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২১৮ কিমি) পূর্বে থেমেছিল। জাহাজ এবং এর ক্রুদের অবস্থা জানা যায়নি।
হাউছিরা বুধবার লোহিত সাগর এবং আরব সাগরে তিনটি জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে একটি মার্কিন জাহাজও রয়েছে বলে হাউছির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি নিশ্চিত করেছেন।
গাজার সব মানুষকে হত্যা করতে চায় ইসরাইল : পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, গাজায় যা করছে ইসরাইল- এটাকে কোনো অবস্থায়ই যুদ্ধ বলা যাবে না। এটা আসলে সব ফিলিস্তিনিকে হত্যার নৃশংস পরিকল্পনার বাস্তরায়ন। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে (স্পিফ) বুধবার আনাদোলুসহ বিদেশী সংবাদ সংস্থাগুলোর সাথে বৈঠকে এসব কথা বলেছেন পুতিন।
এ সময় আনাদোলুর বার্তা বিভাগের প্রধান ইউসুফ ওজহান পুতিনকে বলেন, তিন বছর আগে আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করেছিলাম, সেই প্রশ্নটা আবারো আজ করছি- আমরা দেখেছি ইউরোপ-আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ গাজায় ইসরাইলের বর্বতার নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমেছেন।তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বিরাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সঙ্ঘাতের অবসান চান। রাশিয়ারও কি এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে। ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘে রাশিয়া কী অবদান রাখতে চায়?
উত্তরে পুতিন বলেন, আমি চাই- ফিলিস্তিনে বর্বরতা এখনই বন্ধ করা হোক, আমরা বেসামরিক লোকজনের ওপর হত্যাকাণ্ড চালানো বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। গাজায় ইসরাইল যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তাকে যুদ্ধ বলা যায় না- এটা আসলে গাজার সব মানুষকে হত্যার একটা নীলনকশা বাস্তরায়ন করছে ইসরাইল। এ জন্য যুক্তরাষ্টেরও কড়া সমালোচনা করেন পুতিন। তিনি বলেন, নারী ও শিশুসহ নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যার জন্য মদদের পাশাশি অস্ত্রও সরবরাহ করে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের আশকারা পেয়ে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইসরাইল। আমরা বিশ্বাস করি, মার্কিন এই একপেশে নীতির কারণেই ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। পুতিন বলেন, এখানে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের পাশাপশি আরেকটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ সঙ্ঘাত চলতেই থাকবে। আমরা বহু আগেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি- সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের জামানায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান আগের মতো এখনো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে।