১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারে আল্টিমেটাম শিক্ষকদের

১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি
-

সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দিয়েছেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই স্কিম প্রত্যাহার করা না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। আগামী ২৪ জুনের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন কার্যকর করা না হলে তারা এই কর্মবিরতিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা। ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এ ছাড়াও, ৩০ জুন শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে, পরীক্ষাগুলো কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে জানান সংগঠনটির নেতারা।
ফেডারেশনের মহাসচিব লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করার পর থেকে শিক্ষকরা অদ্যাবধি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা কোনোভাবেই যেন বিঘিœত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনেকটা প্রতীকী কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণের সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচির মতো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিক্ষকদের সাথে দায়িত্বশীল কোনো পক্ষ যোগাযোগও করেননি।

ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুল ইসলাম বলেন, এটি শিক্ষকদের একক স্বার্থ নয়। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মতের শিক্ষকরা এই আন্দোলনের পেছনে এক কাতারে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এটি কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। বরং একপক্ষ শিক্ষকদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, পয়লা জুলাই থেকে এ দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হবে না। চেয়ারম্যানরা সব বিভাগ বন্ধ করে দেবেন। কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। হলের হাউজ টিউটররা আর কোনো হলে যাবেন না। কোনো ইনস্টিটিউটের পরিচালক আর ইনিস্টিটিউটে যাবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গবেষণা, ওয়ার্কশপ তারা করবেন না। নতুন কোনো কর্মসূচি শিক্ষকরা গ্রহণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিও বন্ধ থাকবে। কারণ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিচালকও একজন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গবেষণাগার বন্ধ হয়ে যাবে পহেলা জুলাই থেকে। পহেলা জুলাই থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। এটাই সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপরেখা।
শিক্ষক নেতারা জানান, এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের মধ্যে চরম হতাশা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রস্তাবিত প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে বর্তমান শিক্ষার্থী, যারা আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আসতে আগ্রহী, তারাই এর ভুক্তভোগী হবেন। কাজেই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান আন্দোলন আগামী দিনের তরুণ সমাজের স্বার্থরক্ষা তথা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে। আমরা এখনো আশা করি শিক্ষক সমাজকে যারা সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের চলমান প্রতীকী কর্মসূচি সর্বাত্মক আন্দোলনে পরিণত হবে।
গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এ সময় দাবি আদায় না হলে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা করেন নেতারা।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সাথে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement