এবার প্রেমের বলি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র
নদীতে পাওয়া গেল লাগেজ ভর্তি খণ্ডিত লাশ- ময়মনসিংহ অফিস
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
এবার প্রেমের বলি হলেন বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ওমর ফারুক সৌরভ। চাচাতো বোনকে ভালোবেসে দুর্বৃত্তদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সদর উপজেলার মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে লাগেজে তার খণ্ডিত লাশ পাওয়া গেছে। কালো রঙের সেই লাগেজে লাশের বিচ্ছিন্ন দু’পা ও পলিথিনে মোড়ানো খণ্ডিত মাথাসহ চারটি টুকরো ছিল। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সেই খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে। এমন খবরে ঘটনাস্থলে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, রোবরার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা সেতুর নিচে সুতিয়া নদীতে একটি কালো রঙের ট্রলি লাগেজ দেখে স্থানীয়রা তাদের খবর দেয়। এরপর পুলিশ সেখানে পৌঁছে নদীর কচুরিপানার মধ্য থেকে লাগেজটি ডাঙায় তুলে আনেন। লাগেজ খুলতেই দেখা যায় এক ব্যক্তির দুই পা ও মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন চার খণ্ডিত লাশ। সাথে পাওয়া যায় দু’টি বালিশ, কাঁথা ও একটি পর্দা।
ময়মনসিংহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, খণ্ডিত লাশের পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ, ডিবি, পিবিআই ও সিআইডি যৌথভাবে তদন্ত করেছে। আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই ব্যক্তিকে অন্য কোথাও হত্যা করে লাশ সেতুর ওপর থেকে সুতিয়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। শনিবার রাতে কোনো এক সময় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।
তিনি বলেন, হত্যার পর লাগেজে মাথা ছাড়া লাশ ভরে ব্রিজের ওপর থেকে পানিতে এবং পলিথিনে মোড়ানো মাথা পাটক্ষেতের কাছে ফেলে যায় ঘাতকরা। লাগেজে শরীরের খণ্ডিত অংশের সাথে কাঁথা-বালিশও পাওয়া গেছে। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ‘মেশিন’ দিয়ে গলা ও পা কাটা হয়েছে। পরিচয় যাতে শনাক্ত না করা যায়, সেজন্য আলামতও নষ্ট করা হয়েছে।
সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফয়জুর রহমান তুহিন জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ব্রিজের নিচে একটি মাথা পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে জানালে তিনিই প্রথম পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশের জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি ফারুক হোসেন জানান, রোববার সকালে স্থানীয়রা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদীতে লাশ পড়ে থাকতে দেখে কোতোয়ালি থানায় খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি লাগেজের ভেতর থেকে মাথা ছাড়া শরীরের চার খণ্ড উদ্ধার করে। অদূরেই পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথাটি পাওয়া যায়। কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন জানান, খণ্ডিত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। লাশের বয়স আনুমানিক ৩০ বছর হবে।
পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, খুন হওয়া ওমর ফারুক সৌরভ বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার মাইজহাটি ইউনিয়নের তারাটি গ্রামে। সে ডাক বিভাগের কর্মচারী ইউসুফ আলী আকন্দের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রেমঘটিত কারণ রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সৌরভ তার চাচাতো বোন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তার কন্যাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু মেয়ের পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে তাকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। হত্যাকাণ্ডের খবর সর্বত্রই চাউর হলে সৌরভের বোন ও মামা এসে লাশ শনাক্ত করেন। মাইগবাজ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: বোরহান উদ্দিন জানান, সৌরভ পরিবারের সাথে ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন।