জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
নগর নীতিমালার বাস্তবায়ন নেই মন্তব্য করে পরিবেশবিদরা বলেছেন, জ্বালানি চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বায়ুমানের ব্যাপক অবনতির কারণ হতে পারে। গতকাল এক সেমিনারে তারা এ কথা বলেন।
ডেইলি স্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজিনাস নলেজ (বারসিক) এবং কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) যৌথভাবে সোমবার আয়োজন করে। ‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে চ্যালেঞ্জ : প্রেক্ষিত ঢাকা মহানগরী’ শীর্ষক এ জাতীয় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশে ইইউর এনার্জি, ইনভেস্টমেন্ট গ্রান্টস এবং ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সের অ্যাটাচি-প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিয়ারা ভিদুসি। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মো: কামরুজ্জামান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বারসিকের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রথমে বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। নগর দরিদ্রদের জন্য রাজউকের কোনো পরিকল্পনা নেই। গবেষণার ফলাফলটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাছে পৌঁছাতে হবে। নগর নীতিমালা তৈরি হয়েছে কিন্তু সেটির কোনো বাস্তবায়ন নেই। নগর নীতিমালাতে দরিদ্রদের জ্বালানিসহ অন্যান্য অধিকারের বিষয় বলা হয়েছে। তাই এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বায়ুমান এবং জ্বালানি উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জ্বালানি চাহিদা পূরণে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিচ্ছে যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বায়ুমানের ব্যাপক অবনতির কারণ হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার বৃদ্ধি এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমরা যখন কোনো প্ল্যান করি তখন বস্তিবাসীদের বাদ দিয়েই করি। নগরের এই জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে আমরা কখনোই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের যে চ্যালেঞ্জ সেটি আমাদের এই বস্তিবাসীদের নিয়েই মোকাবেলা করতে হবে।
স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমরা যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছি সেটি পরিবেশে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করে যেগুলো আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। আমরা যত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছি তত আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং বস্তিবাসীদের আলাদা করে না দেখে তাদের নিয়েই জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব নবায়নযোগ্য জ্বালানি কিভাবে সংরক্ষিত হবে সেটিও ভাবতে হবে।
ইইউর প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিয়ারা ভিদুসি বলেন, আমরা জানি নবায়নযোগ্য শক্তিই ভবিষ্যৎ। তাই আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তিকে জনসাধারণের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। সবার মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
জাতীয় সংলাপের মূল বক্তব্যে বারসিকের মো: কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরের ৬৪ ভাগই দরিদ্র পরিবার। রান্না ও বিদ্যুৎ বাবদ গড়ে একটি পরিবার ২৩৮৯ টাকা খরচ করে। অর্থাৎ মোট আয়ের ১৫% চলে যায় জ্বালানি খরচে। গবেষণায় আরো বলা হয়, বিগত দুই বছরের মধ্যে ৮% পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ৫৪% রান্নার লাকড়ি চুলা থেকে। রান্নার ধোঁয়ার কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে ২২% পরিবারের সদস্যদের গুরুতর কাশির সমস্যা হয়েছে। গবেষণায় মাত্র ১০% উত্তরদাতা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ শব্দটির সাথে পরিচিত। ঢাকার নগর দরিদ্র পরিবারগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহের অভাব রয়েছে।
বিআইপির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বস্তিবাসীদের ফরমাইল হাউজিংয়ে নিয়ে আসতে হবে। কারণ ইনফরমাল হাউজিং-এ তাদের জ্বালানি সমস্যা সমাধান করা যাবে না। পরিকল্পনায় বস্তিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ফরমাল একসেস দিতে হবে সোলার ও গ্যাস সংযোগে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা