মৃত্যুর ১৫ বছরেও অক্ষত লাশ কাফনে লাগেনি দাগ
- রংপর অফিস
- ০২ জুন ২০২৪, ০১:৩০
মৃত্যুর ১৫ বছর পর কবরে মিলল অক্ষত লাশ। কাফনের কাপড়েও লাগেনি সামান্য দাগ। চতুর্পাশে চিকচিক করছিল আয়নার মতো বালু। ঘটনাটি রংপুর মহানগরীর নব্দিগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকার। গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের কাজ করার কারণে কবর স্থানান্তরের সময় ঘটেছে বিরল এই ঘটনা। দ্বিতীয়বার মৃত মানুষকে অবিকল দেখতে পেয়ে তাজ্জব স্বজন ও এলাকাবাসী। ইসলামিক স্কলারদের দাবি, আল্লাহর বিধি-নিষেধ মান্যকারী মানুষের রিজিকও কবরে হয়। তাদের কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। ওই ব্যক্তির ক্ষেতেও হয়েছে তাই।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলে এ ঘটনা দেখা গেছে। রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রংপুর মহানগরীর গোদা শিমলা এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ কাজ চলায় স্থানীয় কয়েকটি কবর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন স্বজনরা। দু’দিনে চারটি কবর স্থানান্তরের পর আরেকটি কবর খুঁড়তেই ঘটে আশ্চর্য এই ঘটনা। দেখা গেল অক্ষত অবস্থায় ধবধবে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে লাশ। সামান্য পিঁপড়াও স্পর্শ করেনি কাফনের কাপড় কিংবা শরীর। ১৫ বছর আগে কবরস্থ করার সময় যেভাবে কেবলামুখী করে রাখা হয়েছিল সেভাবেই ছিল লাশ। ২০১০ সালে সেখানে কবরস্থ করা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা মরহুম আব্দুস সামাদকে। তখন তার বয়স হয়েছিল ১২৩ বছরেরও বেশী। এ ঘটনায় অবাক স্বজন, এলাবাসী। দ্বিতীয়বার স্বচক্ষে অক্ষত অবস্থায় দেখার সেই স্মৃতি এই প্রতিবেদককে জানাতে গিয়ে কখনো হাস্যোজ্বল কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও স্থানীয়রা।
লাশ উত্তোলনে অংশ নেয়া মরহুম আব্দুস সামাদের ছেলে নুর-উন নবী ইসলাম জানান, ‘ ২০১০ সালে আমার বাবা যেদিন মারা যান। সেদিন নিজে বাড়ি থেকে হেঁটে এসে পুকুরে গোসল করেছিলেন। গোসল করে বাড়িতে গিয়ে চেয়ারে বসার পরপরই মৃত্যু হয়েছিল তার। সড়ক ও জনপথের জায়গায় আমাদের পারিবারিক কবরস্থান পড়ে যাওয়ায় আমরা সব কবর সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেই। দুই দিনে ছোট মায়ের কবরসহ চারটা কবর তুলি। যখন বাবার কবর তোলার জন্য হাত লাগাই, খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করি। প্রথমে দেখা গেল সাদা কাপড়। তখন কোদাল মারা বন্ধ করে দিলাম। পরে হাত দিয়ে মাটি সরাতে থাকলাম। দেখলাম আয়নার মতো বালু। বালুটাকে মনে হচ্ছিল আয়না, ঝকঝকা। পরে রাজমিস্ত্রির করনি দিয়া বালু সরাই। এরপর পুরা লাশটা পাওয়া গেল। যেভাবে ২০১০ সালে রাইখছিলাম। সেভাবেই পাইছি বাবাকে। কিছুই নষ্ট হয় নাই। কাপড়ের ওপরের বাঁধনগুলোও সাদাই আছে। পরে অন্য জায়গায় নিয়ে আবার দাফন করি। আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে পড়তেন। তাবলিগে যাইতেন। চিল্লাই যাইতেন। আর চাষাবাদ করতেন। তার বয়স হয়েছিল ১২৩ বছর। আল্লাহ আমার বাবাকে অক্ষত রেখেছেন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
এ বিষয়ে রংপুর ধাপসাতগড়া বায়তুল মোকাররম মডেল কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল, মাওলানা আ ন ম হাদিউজ্জামান জানান, ‘যে মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার ঠিকমতো এবাদত করবে। আল্লাহ তায়ালার নিষেধ মেনে চলবে যা আদেশ আছে সেটা পালন করবে, এভাবে যদি চলতে পারেন তাহলে কবর থেকে শুরু হওয়া মানে সব কিছুর শুরু। তাকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, তাকে কিছুই স্পর্শ করবে না। কেয়ামত পর্যন্ত কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ তায়ালা কবরের মধ্যেও রিজিক দিয়ে থাকেন।’
ইসলামিক স্কলার হাদিউজ্জামান বলেন, ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, যারা আল্লাহর রাস্তায় মারা যায়, তাদের তোমরা মৃত বলো না। তারা জীবিত এবং কবরে আল্লাহ তাদের রিজিক দেন’ তো রিজিক কাদের কবরে দিবেন আল্লাহ। যদি তারা কবরে জীবিত না থাকে। এই জাতীয় লোকগুলোকে আল্লাহ তায়ালা তার জান্নাতি খাবার কবরে পৌঁছে দেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই তার লাশ অক্ষত থাকবে। ওই অক্ষত লাশ হিসেবেই তিনি কিয়ামতের মাঠে উড্ডয়ন হবেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দেখিয়ে দেখিয়ে বলবে দেখো, এরা আমার খাস বান্দা। এই লাশকে নমুনা হিসেবে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দেখাবেন। আমার বিশ্বাস, এই মানুষটি একজন মহীয়সী ঈমানদার মানুষ ছিলেন। যার কারণে কোনো পিঁপড়া বা অন্য কিছু কোনোভাবেই তার শরীরে ও কাপড়ে স্পর্শ করেননি। এটা আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশ । আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক আমরা সেই দোয়া করি।’
১২৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিজ বাড়িতে মারা গিয়েছিলেন আব্দুস সামাদ। পেশায় কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। ৮ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন মরহুম আব্দুস সামাদ। এর মধ্যে দুই ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছেন। তার তিন ছেলেই ছিলেন সৌদি প্রবাসী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা