১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি : জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব

-


জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ জাতিসঙ্ঘের অনেক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। এ কারণে বাংলাদেশকে আমরা জাতিসঙ্ঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করি।
গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সাথে বৈঠকে গুতেরেস এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনীতে তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশের অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবেলার সক্ষমতার প্রশংসা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিম্ন আয়ের দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা চান। গুতেরেস এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এ উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা উচিত, শাস্তিদান নয়। মহাসচিব বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন।

হাছান মাহমুদ ফিলিস্তিনের গাজায় সঙ্ঘাতসহ চলমান বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, রাফায় সঙ্ঘাত এড়াতে আপনি যেভাবে নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তার প্রশংসা করেছে।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর বিশ্বের মনোযোগ ধরে রাখা, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মর্যাদার সাথে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং রাখাইনে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির উন্নতির জন্য জাতিসঙ্ঘের জোরালো ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানবিক সূচকসহ সব সূচকে পাকিস্তানকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে কয়েকটি সূচকে ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়েও ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।

জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের যোগদানের অর্ধশত বর্ষপূর্তিতে অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান হাছান মাহমুদ।
জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ও মিশনের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার যৌথ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
এ সময় রাখা বক্তব্যে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অন্যতম অবদান রাখা দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার অঙ্গীকার তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ সবসময় শান্তির প্রচেষ্টায় জাতিসঙ্ঘের অগ্রভাগে রয়েছে। বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিহত সবার পরিবার ও স্বজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বিশ্বময় সঙ্ঘাত ও সহিংসতার ক্রমাগত বৃদ্ধি শান্তির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই।
পরে হাছান মাহমুদ জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স ও অস্ট্রিয়ার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেফান প্রিটেরহফারকে সাথে নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ২০২৩ সালে ৩৪টি দেশের ৬৪ জন আত্মদানকারী শান্তিরক্ষীর নামফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রদূত আবদুল মুহিত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছ থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের শহীদ দুই শান্তিরক্ষীর পক্ষে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ গ্রহণ করেন।
ওআইসি দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিং : একই দিন বিকেলে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলন কক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এক ব্রিফিংয়ে নিউইয়র্কে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইনে সঙ্ঘাত বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকারসহ তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টায় ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের সংহতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরসনে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অগ্রভাগে থাকার জন্য তিনি ওআইসির প্রশংসা করেন।
সৌদি আরব, গাম্বিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইরান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, মিসর ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার প্রশংসা করেন। তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement