১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দরপতনের স্রোতে বিক্রির চাপে ব্যাংক, বীমা, ফার্মার শেয়ার

-

- আরো ৪ হাজার কোটি টাকা উধাও পুঁজিবাজারে
- ডিএসইতে ১৬ খাতে লেনদেনের পতন
- এক বছরের তুলনায় সূচক দ্বিগুণ থেকে চার গুণ কমেছে

অব্যাহত পতন ও কোনো ধরনের আশার আলো না পেয়ে পুঁজিবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী চরম হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত। এক বছরের ব্যবধানে প্রধান পুঁজিবাজারে সূচক দ্বিগুণ থেকে চার গুণ পয়েন্ট হারিয়েছে। দরপতনের স্রোতে বিক্রির চাপে ছিল ব্যাংক, বীমা, ফার্মাসিউটিক্যালস, জ¦ালানি, টেলিকম খাতের শেয়ারগুলো। বাজারের পরিস্থিতি দেখে মনে হয় চোর-পুলিশের খেলা চলছে। উত্থানের আলো দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের টেনে এনে আবার ধপাস করে ফেলে দেয়া হচ্ছে। পতনের স্রোতে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন আরো ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে। ডিএসই লেনদেন কমেছে ১৬ খাতে। তবে একই সময়ে লেনদেন বেড়েছে ৫ খাতে। ডিএসইর পিই রেশিও (সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত) আগের সপ্তাহের তুলনায় ১.৫১ শতাংশ বা দশমিক ০.১৫ পয়েন্ট কমেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে নতুন বাজেটের কারণে সব ধরনের বিনিয়োগকারী একটু ধীরে চলো নীতিতে চলছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও পর্যবেক্ষণ করছে কর নিয়ে কী ধরনের ঘোষণা আসে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বৈঠকগুলোর সিদ্ধান্ত সাময়িক সময়ের জন্য প্রভাব ফেললেও কোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সুফল দিচ্ছে না।
ডিএসইর লেনদেনের তথ্য থেকে জানা গেছে, পুরো সপ্তাহজুড়ে দেশের পুঁজিবাজার ছিল বেসামাল। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও কমিটি গঠনের সংবাদে দু’দিন ইতিবাচক ছিল বাজার। দরপতনের স্রোতে ১৯ খাতের মধ্যে পতনে ছিল ১৬ খাত। গেলো সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবগুলো সূচকই আরো কমেছে। ডিএসইএক্স হারিয়েছে ৬০.৪৪ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৩২.৮৬ পয়েন্ট, শরিয়াহ ১৫.৮৪ পয়েন্ট এবং এসএমই সূচক ৩২.৬২ পয়েন্ট হারিয়েছে, যা এক বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে চার গুণ পয়েন্ট হারিয়েছে। বাজার থেকে মূলধন চলে গেছে ৪ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বা ০.৬৩ শতাংশ।

টাকার অঙ্কে লেনদেন গড়ে কমেছে ২৪.৬১ শতাংশ এবং শেয়ার বেচাকেনা ২.৩৯ শতাংশ। সপ্তাহে ৬৭ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট এক হাজার ৯৫০ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে ২ হাজার ৭০ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছিল ৫৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজারটি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড। লেনদেন কমেছে ১১৯ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পাশাপাশি আগের সপ্তাহে যেখানে গড় লেনদেন হয়েছে ৫১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সদ্য বিদায়ী সপ্তাহে সেটা কমে ৩৯০ কোটি ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা হয়েছে। ডিএসইতে মোট ৪১২টি কোম্পানি লেনদেনে অংশগ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টির, দর পতনে ২৪৮টি কোম্পানি। আর ২৭টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত থাকলেও ২৫টি কোম্পানির লেনদেন হয়নি। ডিএসই ব্লক মার্কেটে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ১০ কোম্পানির। এই ১০ কোম্পানির মোট ১৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিগুলো হলো- আইএফআসি ব্যাংক, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইউনিলিভার কনজুমার, লাভেলো আইস্ক্রিম, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিএসআরএম লিমিটেড, ওয়ালটন হাইটেক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। তবে ব্লক মার্কেটে মোট ২২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে। আর এসএমইতে ৪২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকার।

ডিএসইতে ১৬ খাতে লেনদেনের পতন
সবচেয়ে বেশি লেনদেন কমেছে সিমেন্ট খাতে। এ খাতে লেনদেন ৬৪.১৯ শতাংশ কম। এ ছাড়া অন্যগুলোর মধ্যে কর্পোরেট বন্ড খাতে ৫৩.৩৫ শতাংশ, পাট খাতে ৪৯.০৫ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৪৮.০৫ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৪৫.৯১ শতাংশ, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৩৭.৬৪ শতাংশ, সাধারণ বীমা খাতে ৩৫.০১ শতাংশ, সিরামিক খাতে ৩৪.৭৬ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ১১.০৮ শতাংশ, কাগজ ও প্রকাশনা খাতে ৭.৩১ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ৪.২১ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ৪.০৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৩.৩২ শতাংশ, টেলিকমিউনিকেশন খাতে ৩.৩ শতাংশ কম।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম স্টকে তিন কোটি ২১ লাখ ৯২ হাজার ৮৩৯টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড বেচাকেনা হয়েছে মোট ২৬৬ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০৩ টাকা বাজারমূল্যে। ৩২৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিলেও দরপতনের শিকার ২২৫টি, দর বৃদ্ধিতে লাভবান ৭৩টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৫ট কোম্পানি। বাজার মূলধনে অংশীদারিত্ব বেড়েছে এ শ্রেণীর কোম্পানির। তাদের আধিপত্য ছিল। ৮০.৭৫ শতাংশই ছিল এ শ্রেণীর। এ ছাড়া বি শ্রেণীর কোম্পানির ১৬.০৯ শতাংশ, এন শ্রেণীর ২.৫৭ শতাংশ এবং জেড শ্রেণীর ছিল ০.৫৯ শতাংশ। সবগুলো সূচকই উল্লেখ করার মতো পয়েন্ট হারিয়ে পতনেই ছিল। সিএএসপিআই ৩৩১.১৭ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৬৮.৩ পয়েন্ট এবং সিএসসিএক্স সূচক হারিয়েছে ১৯৬.৯৫ পয়েন্ট।

প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটালের পর্যবেক্ষণ হলো, বিক্রির বড় চাপের মধ্যে ছিল এ, বি এবং জেড শ্রেণীর কোম্পানির শেয়ার। ৪৭ শতাংশ বিক্রেতা থাকলেও বাজারে বিক্রির চাপ ছিল ৫৬ শতাংশ। যেখানে ক্রেতা ছিল ৪২ শতাংশ। তবে ১১ শতাংশ বিনিয়োগকারী কোনো ধরনের লেনদেন থেকে নিশ্চুপ ছিল। বিনিয়োগকারীরা বেশির ভাগ ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে (১৮.৫ শতাংশ) সক্রিয় ছিল। তারপরে বস্ত্র খাত (১২.৭ শতাংশ) এবং খাদ্য খাতে (১২.৬ শতাংশ)। পাট খাত (১০.৩ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে।
আর ইবিএল সিকিউরিটিজের পর্যালোচনা হলো, সাম্প্রতিক পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর হওয়া সত্ত্বেও কোনো বড় ইতিবাচক ট্রিগারের অনুপস্থিতির কারণে বাজারের মনোভাব এখনও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। যার ফলে বাজার সপ্তাহজুড়ে নীরব গতির সাক্ষী হতে পারে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও তার পতনের প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে। কারণ আগের সপ্তাহে ৫১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার তুলনায় গড় টার্নওভার ২৪.৬ শতাংশ কমে ৩৯০ কোটি ১০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement