মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১৬ আহত ৭৪৮
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ জুন ২০২৪, ০১:০৬
গত মে মাসে দেশে ১৭০টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৬ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৪৮ জন। যার বেশির ভাগই নির্বাচনী সহিংসতায় এবং আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও অঙ্গসংগঠনের অন্তর্কোন্দলকেন্দ্রিক সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনই সরকারি দলের নেতাকর্মী। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে কমপক্ষে ১৪৪ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী গ্রেফতারের শিকার হয়, তার মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ৮৩ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধী দলীয় কমপক্ষে ৯টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে এবং মিছিল-সমাবেশ কেন্দ্রিক কমপক্ষে ৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মাসে ভৈরবে র্যাব হেফাজতে একজন নারীর মৃত্যু ও যাত্রাবাড়ী থানায় পুলিশের নির্যাতনে এক আসামির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও এ মাসে কারাগারে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’র (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংগঠনটি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের মে মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে ।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের মে মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাসজুড়ে নির্বাচনী সহিংসতা, রাজনৈতিক সহিংসতা ও গ্রেফতার, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, রাজধানীতে রিকশা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের সহিংসতা, হেফাজতে মৃত্যু, গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষ হত্যা, সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইনবহির্ভূত আচরণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশী নির্যাতন ও হত্যার মতো বিভিন্ন বিষয় মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়, মে মাসে নির্বাচনী সহিংসতার অন্তত ১৩৯টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৯১ জন। নিহত ১০ জনের সকলেই সরকারি দলের নেতা ও কর্মী। বেশির ভাগ ঘটনাই চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনন্দ্রেক আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। বিরোধী দলগুলোরর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে দেশে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে মে মাসে তিনটি ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে আগের পাঁচ উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এবার কম ভোটার উপস্থিতির রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ভোটার খরার মধ্যেই সারা দেশে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জাল ভোট, কেন্দ্র দখল ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ প্রায় সব ধরনের অনিয়ম ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক কমপক্ষে ১৩৪টি সহিংসতায় অন্তত ৫৮০ জন আহত ও সাতজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও শরীয়তপুরে অর্ধশতাধিক, সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ২০টি, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ৩০টি, ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ৪০টি, ভোলায় ৩০টিসহ সারা দেশে প্রায় চার শতাধিক বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের অনিয়মের সাথে যুক্ত থাকায় বেশ কয়েকজন প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং ও নির্বাচনী কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছেন। এটি উদ্বেগজনক যে, ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও এখনো কিছু জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। মে মাসেও এরূপ সহিংসতার অন্তত তিনটি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ০২ জন, আহত হয়েছেন চারজন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, গত মাসে অন্তত ২৬টি হামলার ঘটনায় ৪৮ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্তত পক্ষে ২৮ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ০৪ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ১৫ জন ও ০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। চলতি মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেন্দ্রিক সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শরীয়তপুর জাজিরায় ২১ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ১০ জনেরও বেশি সাংবাদিক আহত হন। আশঙ্কাজনকভাবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীনে দায়ের করা তিনটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন একজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে আট জন। এ ছাড়া ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের ওপর দু’টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
মে মাসে ৩৪টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৪ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ৩১ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। রাজধানীতে রিকশা শ্রমিকদের ওপর পুলিশের হামলায় একজন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জনেরও বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন। এটি উদ্বেগজনক যে, এ মাসে ‘গণপিটুনির’ ১০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন পাঁচজন এবং আহত হয়েছেন আটজন। এ ছাড়াও ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’ কর্তৃক ছয়টি হামলার ঘটনায় তিনজন বাংলাদেশী নিহত, দুই জন আহত ও দুইজন গ্রেফতার হয়েছেন।
মে মাসে ১৪০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ১৯ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১১ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এক জন শিশুকে এবং আত্মহত্যা করেছেন একজন। ৩০ জন নারী ও কন্যাশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে শিশু সাতজন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতজন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন চারজন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন, আহত হয়েছেন ছয়জন এবং আত্মহত্যা করেছেন পাঁচজন নারী। অন্য দিকে এটি উদ্বেগজনক যে, ৭৯ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫০ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা