পৌর বোর্ড আইনের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজ করার দাবি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:৫৫
বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন ২০০৪ এর রায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজ করার দাবি উঠেছে। পৌর বোর্ড আইনে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোরও দাবি জানানো হয়।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত ‘বিরোধ মীমাংসা (পৌর বোর্ড) আইন, ২০০৪ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ দাবি জানান। সেমিনারের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়ন নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। সহযোগিতায় ছিল মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পৌরসভা সমিতি, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ওয়ার্কিং টুগেদার রিয়েলাইজ পটেনশিয়াল।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের আদালতসমূহে মামলার জট লেগেই আছে। জট ছাড়াও মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি ও অর্থ ব্যয়ের কারণে জনসাধারণ সালিসযোগ্য, আপসযোগ্য বিরোধ স্থানীয়ভাবে মেটাতেই আগ্রহী হয়। বিভিন্ন স্তরে জনগণের সালিসযোগ্য বিরোধ মীমাংসার জন্য আইনের আওতায় আধা-বিচারিক কাঠামো যেমন, গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদে ‘গ্রাম আদালত’ ও বিরোধ মীমাংসা (পৌর এলাকা) বোর্ড আইন, ২০০৪ এর অধীনে পৌরসভায় বিরোধ মীমাংসা বোর্ড রয়েছে।
বক্তারা বলেন, আইনি কাঠামো থাকার ফলে ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের জনগণ তাদের মধ্যে সংঘটিত আপসযোগ্য বিরোধ আদালতে না গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাম আদালত ও পৌর বিরোধ মীমাংসা বোর্ডের মাধ্যমে স্বল্প খরচে এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশে মীমাংসার সুযোগ পান। ফলে স্থানীয়ভাবে জনসাধারণের ন্যায়বিচারে অভিগম্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গ্রাম আদালতের আর্থিক এখতিয়ার তিন লাখ টাকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পথে থাকলেও পৌর বোর্ড আইনে বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার এখনো ২৫ হাজার টাকা। ফলে, পৌরবাসী এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সেমিনারে বক্তারা আরও বলেন, নগরায়নের ফলে জনবসতির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে অপরাধ ও বিরোধ সংগঠনের প্রবণতা বেশি।
আনুষ্ঠানিক আদালতে সালিসযোগ্য ও আপসযোগ্য মামলা নিষ্পত্তির জন্য কমপক্ষে দুই বছরের অধিক সময় অপেক্ষা করতে হয়। আবার এই ধরনের ছোট খাটো বিরোধ বা মামলা থেকেই জন্ম নেয় বড় বিরোধ। ফলে মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতিপক্ষকে হয়রানির জন্য একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগও রয়েছে। এভাবে আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের আদালতগুলোতে ৪২ লাখ মামলা বিচারাধীন।
মেট্রোপলিটন এলাকায় এই মামলার জট তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আমাদের দেশে ৯৪ হাজার ৪৪৪ জনের বিপরীতে বিচারকের সংখ্যা একজন। একজন বিচারকের বিপরীতে মামলার সংখ্যা প্রায় ১৮৮৩টি। ফলে আদালতে সালিসযোগ্য ও আপসযোগ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় বিচার প্রার্থীদের আর্থিক ক্ষতি, হয়রানি ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পৌরসভার নাগরিকদের একই সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। আমরা মনে করি পৌরসভার আওতায় পৌর বোর্ড গঠন করে বিকল্প পন্থায় আপসযোগ্য বিরোধসমূহ নিষ্পত্তি করতে পারলে প্রাতিষ্ঠানিক আদালতের মামলার জট কমবে, জনসাধারণের ভোগান্তি কমবে এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা হবে।
এ সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে আইনটি সংস্কারে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- পৌর বোর্ড আইনে বিচারিক ক্ষমতার আর্থিক এখতিয়ার ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো; রায় বাস্তবায়ন পদ্ধতি সহজতর করা; আইনটির শিরোনাম পরিবর্তন করে পৌর আদালত নামে আইনটি তৈরি করা; বোর্ড পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের (পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তি) প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে আইনটি পরিচালনা করা; মেয়রের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে আপত্তি উপস্থাপন বা মেয়রের অনুপস্থিতিতে কে বোর্ডের দায়িত্ব পালন করবেন তা স্পষ্ট করা; অতি দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করা ইত্যাদি।
এসডিজি বাস্তবায়ন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ শহীদ, দ্য এশিয়ান ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা