জাতি একটি কঠিন সময় পার করছে : ডা: শফিক
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:৫৪
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, জাতি একটি কঠিন সময় পার করছে। মানুষের কথা বলার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার নেই। সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের আজ কোনো অধিকার নেই। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন এবং ব্যক্তি ও সংগঠন সরকারের নিগ্রহের শিকার। ইসলামী দলগুলো সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী বর্তমান সরকারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে। জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে এবং তা কার্যকর করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে জামায়াতের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রাখা হয়। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সরকার প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করে।
গতকাল সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের, সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডা: শফিকুর রহমান বলেন, সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিনা ভোটের সরকার দুর্নীতি-দুঃশাসন চালিয়ে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সমাজ জীবনের কোথাও শান্তি নেই, শৃঙ্খলা নেই। আইনের শাসনের বালাই নেই। দেশের অর্থনীতি আজ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দেশের অর্থব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিঘিœত করেছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষার পরিবর্তে বিজাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম এর অবতারণা করে নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সরকারের ষড়যন্ত্র থেকে মাদরাসা শিক্ষা রেহাই পায়নি। কওমি মাদরাসাও আজ হুমকির মধ্যে। দেশের আলেম-ওলামা, ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নানাভাবে নাজেহাল করা হচ্ছে। সরকারের এইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াত আমির বলেন, বিপুল সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ আজ নানা সঙ্কটে জর্জরিত। দেশকে সঙ্কট থেকে উদ্ধারের জন্য জামায়াত কর্মীদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে দিয়ে তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্যদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে হবে। সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জামায়াত আমির : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান গত মঙ্গলবার পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধূলেশ্বর ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা ও ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে নগদ অর্থ ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন। জেলা আমির অধ্যাপক মু. শাহ আলমের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি এ বি এম সাইফুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মু. শাহাবুদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরীর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মু. বাবর প্রমুখ।
জামায়াত আমির ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের মাগফেরাতের জন্য এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। তিনি নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং আহতদের খোঁজখবর নেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে নগদ অর্থ এবং উপহারসামগ্রী প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মালম্বীর ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝেও জামায়াত আমির উপহারসামগ্রী প্রদান করেন।