ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর নির্মাণ হচ্ছে ৭৩১ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৩১ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে। এ ছাড়া বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে কোটি টাকা ভেরিয়েশনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই দু’টি প্রস্তাবে মোট ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার ৬৪৩ টাকা ।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাব দু’টিতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাস্তবায়ন ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান।
তিনি বলেন, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মপুত্র নদীর ওপর ৭৩০.৯০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলায় ব্রাহ্মপুত্র নদীর ওপর ৭৩০.৯০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে দু’টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দু’টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১২৫ কোটি টাকা।
সচিব বলেন, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বৃদ্ধির ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে (১) ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিসেস লি:; এবং (২) এসিই, ঢাকাকে ২১ কোটি ২৫ লাখ ২২ হাজার ৫৬০ টাকায় নিয়োগের চুক্তি করা হয় যার মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন তারিখ শেষ হয়। তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ চলমান থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ০১/০৭/২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত ১৮ মাস বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৩ কোটি ১৮ লাখ ৭ হাজার ৬৪৩ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুর সার্ভিস লাইফ টাইম চলে যাওয়ায় পট বিয়ারিং এবং শক ট্রান্সমিশন ডিভাইস/সিসমিক ডিভাইস প্রতিস্থাপন করতে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৪ টাকা।
সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুর জন্য পট বিয়ারিং এবং শক ট্রান্সমিশন ডিভাইস/সিসমিক ডিভাইস প্রতিস্থাপন (সরবরাহ, ইনস্টলেশন, পরীক্ষা এবং কমিশনিং) শীর্ষক কাজের ঠিকাদার নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে সেকেন্ড হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড এবং চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন। এতে মোট ব্যয় হবে ১২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৪ টাকা। যেটা প্রাকলিত ব্যয় ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ কম।
সচিব বলেন, ১৯৯৮ সালে উন্মুক্ত করা হয় সেতুর লাইফ সার্ভিস ২৫ বছর অতিক্রম করেছে। সার্ভিস লাইফ টাইম চলে গেছে। এখন সার্ভিস করা দরকার। এ জন্য পট বিয়ারিং এবং শক ট্রান্সমিশন ডিভাইস/সিসমিক ডিভাইস প্রতিস্থাপন করতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের আওতায় ভারতের অর্থায়নে কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে ৪-লেনে উন্নত করতে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শ নিয়োগের অনুমোন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
বৈঠকে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৩৬২ কোটি ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার সয়াবিন তেল, পামওয়েল ও মসুর ডাল কেনারও অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সয়াবিন তেল, ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার পামওয়েল এবং ১০১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মসুর ডাল রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রস্তাব টেবিলে উত্থাপন করা হলে তিনটি প্রস্তাবেরই অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদ দেয়া হয়েছে।
এই সয়াবিন তেল কিনতে মোট খরচ হবে ৭৫ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৫১ টাকা ৪৫ পয়সা। আগের মূল্য ছিল ১৫২ টাকা ৪৫ পয়সা। অর্থাৎ আগের থেকে লিটারের এক টাকা কমে এবার সয়াবিন তেল কেনা হবে। সুপারিশকৃত দরদাতা সোনারগাঁও সিক্সক্রাসিং মিলস লিমিটেড।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবে টিসিবির জন্য এক কোটি ৩০ লাখ লিটার পরিশোধিত পামওয়েল কেনার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৪৩ টাকা। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকার সুংসিং এডিবেল ওয়েল লিমিটেড।
এ ছাড়া সরকার এক কোটি পরিবারকে যে সাপোর্ট দিচ্ছে তার আওতায় ট্রেডিং টিসিবির জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০১ টাকা ৩০ পয়সা। এ হিসাবে মোট দাম পড়বে ১০১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর আগে গত ২১ মে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয় ১৫২ টাকা ৪৫ পয়সা।
সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের সেরাম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, সিঙ্গাপুরের মেইনহার্ট প্রাইভেট লিমিটেড, কোরিয়ার পিয়ংঘওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস লিমিটেড, বাংলাদেশের দেব কনসালট্যান্টস লিমিটেড, তারেক হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, (সাব-কনসালটেন্ট) এবং নলেজ ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (কেএমসি) লিমিটেড (সাব-কনসালট্যান্ট)। এতে মোট ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৭ টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা