পথে পথে সোনালুর সৌন্দর্য
- আব্দুর রাজ্জাক ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
- ২৭ মে ২০২৪, ০১:১৮
এখন সময় সোনালু ফুলের। সবুজ পাতার ফাঁকে হলুদিয়া ফুলে সেজেছে প্রকৃতি, সেজেছে পথ-ঘাট। সড়ক-মহাসড়ক, প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার পাশে ছোট বড় সোনালু ফুলে মুগ্ধ পথচারী। থোকায় থোকায় সোনালু ফুল দেখে মনে হয় ঝাড়বাতি ঝুলে থাকা । ভ্যাপসা গরমে হাঁপিয়ে উঠা পথিকের চোখে নামে এক পলক প্রশান্তি। তবে দিন দিন এ গাছের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।
এ সময়ে দেশজুড়েই চোখে পড়ে সোনালুর হাসি। তবে মানিকগঞ্জের ঘিওরে তা যেন-একটু বেশিই। ঘিওর থানার মোড়, দৌলতপুর-বরংগাইল সড়ক, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের জোকা, পাঁচুরিয়া, মহাদেবপুর, উপজেলা পরিষদ চত্বর, বানিয়াজুরী, রাথুরা-তরা রাস্তা, জাবরা, বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, তেরশ্রী রাস্তা, সরকারি ডিগ্রি কলেজের পেছনের রাস্তা, পঞ্চরাস্তা মোড়, বরটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, নালী-কেল্লাই সড়কের দু’পাশে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা-পুখুরিয়া রাস্তা, বাষ্টিয়া খেলার মাঠ, পয়লা গ্রামীণ রাস্তা, ভোর বাজার, আশাপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সোনালুর দোল দেখে মনে হয় এ যেন প্রকৃতির হলুদাভ উষ্ণ অভ্যর্থনা।
স্কুলশিক্ষিকা ফেরদৌসী বেগম বলেন, রোদ্দুর আর গরমে ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে সোনালু ফুল প্রকৃতিতে মেলে ধরেছে তার আপন রঙ। চোখ জুড়িয়ে যায় থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা সোনালু ফুলের সৌন্দর্যে।
জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জে এ গাছ বাঁদর লাঠি নামেই বেশি পরিচিত! একসময় সচরাচর দেখা মিলতো। এক দশকে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে সোনালু গাছের সংখ্যা। তবে ইদানীং অনেক নার্সারি ব্যবসায়ী কলম জাতের সোনালু চারা বিক্রি করছেন।
বানিয়াজুরী সিফাত নার্সারির ম্যানেজার নূর ইসলাম বলেন, গত বছর থেকে সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার কলম চারা বিক্রি করছি। আকারভেদে প্রতিটি চারা দুই শ’ থেকে চার শ’ টকায় বিক্রি হয়।
উপজেলার জোকা যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের সামনে সারিবদ্ধ বেশ কয়েকটি সোনালু গাছভর্তি ফুল। মাটিতে বিছিয়ে রয়েছে অজস্র পাপড়ি। এখানে ছবি তুলছেন বানিয়াজুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তুর্য্য, শান্তা, সুমন, তুলি, জাবির হোসেন। তারা বলেন, যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে কাজে আসছি, দেখতে পেলাম সোনালু ফুল খুব সুন্দরভাবে রঙ ছড়াচ্ছে। অনেকগুলো ছবি তুললাম, ফেসবুকে পোস্ট করে দিয়েছি।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তুহিন সুলতানা বলেন, সোনালু দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি নামেও আছে বাহার। এ ফুলকে সোনাইল, সোঁদাল, বাঁদর লাঠি নামে স্থানীয়ভাবে ডাকে। ইংরেজি নাম- এড়ষফবহ ঝযড়বিৎ ঞৎবব, বৈজ্ঞানিক নাম- ঈধংংরধ ভরংঃঁষধ। ঈধবংধষঢ়রহরধপবধব পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়।
কবি দোলা রায় বলেন, আমরা শৈশবে বাড়ির আশপাশেই অনেক সোনালু গাছ দেখেছি। এ ফুল দিয়ে মালা গেঁথেছি, খোঁপা সাজিয়েছি। এ গাছ কমে গেছে। কবি-লেখকদের এক অনবদ্য উপাদান হলুদিয়া সোনালু ফুল।
মানিকগঞ্জ সাধনা ঔষধালয়ের চিকিৎসক উত্তম পালিত বলেন, এ গাছের পাতা ও বাকল ভেষজ গুণে ভরপুর; ডায়রিয়া ও ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত হয়। ফলের শাঁস বাত, বমি ও রক্তস্রাব প্রতিরোধে উপকারী।
প্রকৃতি গবেষক সুবীর সরকার বলেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় এবং গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না। প্রাকৃতিকভাবে যা হয়, তার ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙের সৌন্দর্য বিতরণ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাজেদুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্মের প্রকৃতিতে সোনালু অন্যতম ফুল। এ গাছগুলো পরিবেশের জন্য উপকারী ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এর ফুল দৃষ্টিনন্দন শোভা বর্ধনকারী। এই গাছ প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে, বড় হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা