নানা আয়োজনে বৌদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে গতকাল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনা, অর্চনার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ ও সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করেন। এ ছাড়া শান্তি শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন।
রাজধানীতে বৌদ্ধ পূর্ণিমার মূল আয়োজন হয় সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে। সকাল সাড়ে ৭টায় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বুদ্ধ বন্দনার পর সবুজবাগ বৌদ্ধ বিহার থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়, এ সময় ওড়ানো হয় বেলুন। এরপর ভক্তরা আসতে শুরু করেন বিহারে। স্নান সেরে শুচিবস্ত্র ধারণ করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত হন তারা। সকাল সাড়ে ৯টায় বৌদ্ধ পূজা মাথায় নিয়ে ভক্তরা মন্দির প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় বাদক দল ঢোল বাজাতে থাকে। সকালের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, ভিক্ষুসঙ্ঘের প্রাতরাশ, মঙ্গলসূত্র পাঠ, বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গ উপোসথশীল গ্রহণ, মহাসঙ্ঘদান, ভিক্ষুসঙ্ঘকে পিণ্ডদান, ত্রিপিটক পাঠ, প্রদীপ পূজা এবং জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে সকালে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ‘জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: উত্তম কুমার বড়ুয়াসহ আরো অনেকে। মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারেও অয়োজন করা হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। সকাল ১০টায় বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণসহ সন্ধ্যায় বৌদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ধর্মমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন।
এ ছাড়া দেশজুড়ে বৌদ্ধবিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সমবেত প্রার্থনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল বিকেলে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বৌদ্ধ নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারাও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতিকে ফুলের তোড়া উপহার দেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে এক হাজারেরও বেশি ব্যক্তি যোগ দেন। ধর্মমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান
কক্সবাজার অফিস জানায়, কক্সবাজারে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’- এ অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বুদ্ধত্বলাভ ও মহা-পরিনির্বাণের স্মৃতি বিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন বৌদ্ধরা।
দিবসটি উপলক্ষে কক্সবাজারে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। এর মধ্যে ছিল সকালে বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, পিণ্ডদান, ভিক্ষু সঙ্ঘের প্রাতঃরাশ, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও দুপুরে জ্ঞাতিভোজনসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা।
দিনটি পালনে জেলার সবচেয়ে বড় ‘শান্তির শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে উখিয়া উপজেলায়। শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ শোভাযাত্রায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা থেকে শুরু হয়ে মরিচ্যা স্টেশন পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে কোটবাজার কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান ভাবনা বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সদ্ধর্ম সভা।
এ দিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে কক্সাজার শহরের অগ্গমেধা ক্যাংসহ রাখাইন পল্লী ও রামু উপজেলার ঐতিহাসিক রামকুট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারসহ জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ পল্লীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের পাশাপাশি ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়।
খাগড়াছড়িতে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত
খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়িতে যথাযথ ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তথা বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নর-নারীরা খাগড়াছড়িতে য়ংড বৌদ্ধ বিহার, ধর্মপুর আর্য বনবিহার, জনবল বৌদ্ধ বিহারসহ জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর মধ্যে ছিল- সমবেত প্রার্থনা, বুদ্ধপূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, পঞ্চশীল প্রার্থনা, অষ্টপরিষ্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, ভিক্ষুদের উদ্দেশে সঙ্ঘ দান, কল্পতরু দান, হাজার প্রদীপ দান, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান, পিণ্ড দান প্রভৃতি।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মমতে, আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
এ দিকে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষে শহরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী য়ংড বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশ, জাতি তথা সব প্রাণীর সুখ ও মঙ্গল কামনা করা হয়। এ সময় দায়ক-দায়িকাদের পঞ্চশীল প্রার্থনা ও ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন য়ংড বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্তমোসারা স্থবির ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা