১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সংসার খরচ চাওয়ায় ঘুরতে নিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা

-


সংসার খরচের জন্য চাপ দেয়ায় ঢাকার পূর্বাচলে ঘুরতে নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর গায়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী। বিলকিস বেগম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী মিজানুর রহমান ওরফে সুমনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত মঙ্গলবার রাতে গাজীপুরের বাসন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, গত ১৯ মে রোববার মিজানুর রহমান তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস বেগমকে পূর্বাচলের ২৪ নম্বর সেক্টরের জঙ্গলে নিয়ে তার গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
গতকাল বুধবার র্যাব-১-এর উত্তরার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, মিজানুর পেশায় ট্যাক্সিক্যাবচালক। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। তবে কয়েক বছর ধরে প্রথম স্ত্রী শিমু, দেড় বছরের মেয়ে, মাসহ রাজধানীর তুরাগ থানার রানাভোলায় একটি ভাড়া বাসায় থাকত সে। এ অবস্থায় দুই বছর আগে কাউকে না জানিয়ে বিলকিস বেগমকে (২৬) বিয়ে করে রানাভোলার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া এলাকায় অন্য একটি ভাড়া বাসায় রাখে।
মিজানুরকে স্বল্প আয়ে দু’টি সংসার চালাতে হতো। তিন-চার মাস ধরে বিলকিস মিজানুরের কাছে সংসারের জন্য একটু বেশি টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। একপর্যায়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিসকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে মিজানুর। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সে মাঝেমধ্যে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যেত এবং সুযোগ খুঁজত।

র্যাবের পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, মিজানুর গত রোববার দুপুরের পর নিজের ট্যাক্সিক্যাবে করে বিলকিসকে নিয়ে পূর্বাচল এলাকায় ঘুরতে যায়। তারা পথে চা পান করেন। এ সময় মিজানুর জায়গা ও সুযোগ খুঁজতে থাকে। বিলকিসকে বিকেল ৪টার পর পূর্বাচলের ২৪ নম্বর সেক্টরের একটি জঙ্গলে নিয়ে যায় মিজানুর। জায়গাটা খুবই নিরিবিলি দেখে সেখানে গাড়ি থামায়। বিলকিস গাড়িতে বসে থাকেন এবং মিজানুর গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির পাইপ দিয়ে পেট্রল বের করে একটি বোতলে ঢোকায়। গাড়িটির ইঞ্জিন তখনো চালু অবস্থায় ছিল। কিছুক্ষণ পর বিলকিস গাড়ি থেকে বের হন। তখন মিজানুর বিলকিসের গায়ে পেট্রল ছিটিয়ে দেয়াশলাই জ্বালিয়ে গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। এ সময় বিলকিস চিৎকার করতে থাকে। বিলকিসের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে দ্রুত বিলকিসকে রাজধানীর চানখাঁরপুলে অবস্থিত শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন সোমবার সকাল ৯টার দিকে বিলকিস মারা যান।
ঘটনার পর মিজানুর আত্মগোপনে চলে যায়। পরে মিজানুরকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১-এর একটি দল ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং তাকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে গাজীপুরের বাসন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। মিজানুর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে দ্বিতীয় স্ত্রিকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement