ঝালকাঠির শীতলপাটি বিদেশেও যাচ্ছে
- ঝালকাঠি প্রতিনিধি
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ঝালকাঠির শীতলপাটি দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তাই ঝালকাঠির রাজাপুরে ৯০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ৮-১০ বছরের শিশুরাও নিপুণ কারুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এ শিল্পের সাথে জড়িতদের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে না। শীতলপাটি শিল্পে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা না থাকায় পুঁজির জন্য কারিগররা দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর মহাজনদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। তবে আশার খবর হচ্ছে, বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি পাওয়া জিআই পণ্যের মধ্যে শীতলপাটিও রয়েছে।
স্থানীয় পাটিকরদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঝালকাঠির শীতলপাটি বহুকাল ধরে দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এখানকার চিকনবেতির শীতলপাটির চাহিদাও প্রচুর। পাইত্রা বা মোত্রা নামে এক ধরনের বর্ষজীবী উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে বেতি তৈরি করা হয়। পরিপক্ব পাটি গাছ কেটে পানিতে ভিজিয়ে ও সিদ্ধ করে তারপর পাটির বেতি তোলা হয়। বেতির উপরের খোলস থেকে শীতলপাটি পরের অংশ তুলে বুকার পাটি এবং অবশিষ্ট অংশ ছোটার কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্ষা মৌসুমে পাইত্রা কিনে বেতি তৈরি করে মজুদ করতে হয়। বর্ষা চলে গেলে শুরু হয় পাটি তৈরির কাজ।
ঝালকাঠি জেলায় চারশতাধিক পরিবার এ শিল্পের সাথে জড়িত। এর মধ্যে রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি গ্রামে রয়েছে শতাধিক পরিবার এবং নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর গ্রামে ৩০০ পরিবার। এরা সবাই পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুরাতন ঐতিহ্যের কারু হাতে গড়া শীতল পাটির জন্য এ গ্রাম দু’টিকে ‘শীতল পাটির’ গ্রামও বলা হয়। এই দুই গ্রামে শত শত হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে বিশাল নজরকাড়া পাটিগাছের বাগান। এখানে শীতলপাটি, নামাজের পাটি ও আসন পাটি নামে তিন ধরনের পাটি তৈরি করা হয়। একটি পাটি বুনতে তিন-চারজনের দুই-তিন দিন সময় লাগে। যা বিক্রি করে ১০০ থেকে এক হাজার টাকা আসে। মধ্যস্বত্বভোগীরা (মহাজনরা) প্রতি পাটিতে লাভ করেন পাঁচশ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। পাইত্রা কেনার জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়। এ জন্য শিল্পীরা মহাজন ও এনজিওর কাছে হাত পাততে বাধ্য হন।
জানা যায়, ঝালকাঠি জেলার ব্রান্ডিং পণ্য শীতলপাটি। এটা দিয়ে তৈরি কিছু পণ্য শহরে শোপিচ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও গ্রামে এটি মাদুর কিংবা বিছানার চাদরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরামদায়ক এ পাটির কদর আছে সর্বত্র। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বংশ পরম্পরায় এ শীতলপাটি তৈরি করছেন দু’টি গ্রামের মানুষ। নারীদের পাশাপাশি পুরুষ ও শিশুরাও নিপুণ হাতে বুনেন শীতলপাটি। পরিবারের অন্যতম পেশা এটি। বছরের ছয় মাস পাটি বুনিয়ে চলে সারা বছরের জীবিকা। আর এ দু’টি গ্রামের উৎপাদিত শীতলপাটি পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা হয়ে সারা দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রফতানি হচ্ছে। তবে সেসব বাজারে এ পাটির চড়ামূল্য থাকলেও ঝালকাঠির পাটি শিল্পীরা কাঁচামাল ও শ্রমের মজুরিসহ এক একটি পাটিতে ২০০ টাকার বেশি লাভের মুখ দেখছেন না। ফলে সংসারে অভাব দারিদ্র্য আর মূলধনের অভাবে আজও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ঝালকাঠির এই আদি কুটির শিল্পটি।
দুই বছর ধরে এসএমই ফাউন্ডেশন শীতল পাটি দিয়ে হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করার প্রশিক্ষণ দেয়ার পর পাটিকরদের জীবনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। তারা এখন শীতল পাটি দিয়ে কলমদানি, টিসু বক্স, ট্রেসহ নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। বাংলাদেশের শিতল পাটির যে চাহিদা তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝালকাঠি থেকেই পূরণ করা হয়। বর্তমানে এখানে বছরে প্রায় তিন কোটি টাকার শীতল পাটি বিক্রি হচ্ছে।
রাজাপুরের হাইলাকাঠি গ্রামের সুদেব পাটিকর বলেন, এখন গরমের দিনে শীতল পাটির কদর বেশি। আমাদের হাতে বোনা শীতল পাটি দূর-দূরান্ত থেকে খরিদদার এসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক দন্যতার কারণে চাহিদা মতো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শীতলপাটি ব্যবসায়ী মুনিন্দ্র পাটিকর জানান, কারিগররা পাটি তৈরি করে আমাদের কাছে বিক্রি করে। সারা দেশে এ পাটির চাহিদা প্রচুর। আমরা বিভিন্ন এলাকায় এ পাটি পাঠাচ্ছি। বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে শীতল পাটি।
ঝালকাঠির পাটি শিল্পী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিনাস পাটিকর বলেন, আমাদের তৈরি পাটির ব্যাপক চাহিদা আছে। এটি বিদেশে রফতানির সুযোগ হয়েছে। চট্টগ্রাম দিয়ে এখানকার শীতলপাটি বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। বিদেশে এ পাটির কদর রয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) ঝালকাঠির উপমহাব্যবস্থাপক ফয়জুর রহমান বলেন, শীতলপাটি শিল্পের জন্য ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শীতলপাটির বাজারজাত, বহুমুখীকরণ, নকশা উন্নয়ন এবং অর্থায়নে সহযোগিতায় কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য শীতল পাটির প্রসার এবং এর সাথে জড়িতদের উন্নয়নের সবসময় সচেষ্ট জেলা প্রশাসন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা