১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উখিয়ায় গহিন অরণ্যে র‌্যাবের অভিযান

অস্ত্র-গোলাবারুদ ও আরসা কমান্ডারসহ আটক ২
-


কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন গহিন অরণ্য লাল পাহাড়ে রাখাইনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) আস্তানায় আবারো অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এ সময় সেখান থেকে হ্যান্ড গ্রেনেড, রকেট শেল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো: শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ও তার এক সহযোগীকেও আটক করেছে র্যাব।
র্যাব সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরাফাত ইসলাম বুধবার দুপুরে উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন অভিযান স্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, বুধবার (১৫ মে) শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশনের পশ্চিমে লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় র্যাব-১৫ এ অভিযান চালায়।
এ দিকে উখিয়ায় আরসার আস্তানায় এই প্রথম উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যান্ড গ্রেনেড পাওয়া গেছে। বেলা ১টায় রামু সেনানিবাসের ক্যাপ্টেন নাদিয়া নুসরাতের নেতৃত্বে একটি বোম্ব ডিস্পোজাল টিম র্যাবের অভিযানে জব্দকৃত বিস্ফোরক, গ্রেনেড, আইইডি এবং রকেট সেল ধ্বংস করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরাফাত ইসলাম জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সঙ্ঘাতকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন করে খুন-খারাবি ও অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে আরসা। তারা রাখাইন থেকে অস্ত্রশস্ত্র এনে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি আরো জানান, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন গহিন এই পাহাড়ে মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা নতুন করে আস্তানা গড়ে তুলছে গোপন সূত্রে এমন সংবাদ পেয়ে র্যাব-১৫ এর একাধিক টিম মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে সেখানে অভিযান শুরু করে। বুধবার ভোরের দিকে আস্তানা ঘেরাও করলে আরসার সন্ত্রাসীরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। র্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়লে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। তখন আরসার সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যাব সদস্যরা আরসা কমান্ডার মাস্টার সলিমুল্লাহ ও তার সহযোগী রিয়াজকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশী রিভলবার, ৯ রাউন্ড ৯এমএম পিস্তলের অ্যামুনিশন, একটি এলজি এবং তিনটি ১২ বোর কার্তুজ জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, বেশকিছু দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হেড মাঝিসহ কয়েক রোহিঙ্গাকে গুলি ও গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ায়। তারই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার ক্যাম্প-সংলগ্ন গহিন পাহাড়ে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার আস্তানা অবস্থান শনাক্ত করা হয়।

তিনি জানান, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে আরসা। এই সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর প্রভাব খাটায়। কেউ আরসার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করলে কিংবা তাদের কথা না শুনলে অপহরণ ও হত্যা শিকার হন। রোহিঙ্গা নাগরিক প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করায় ২০২১ সালে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ আরসার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন। এ ছাড়াও ২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। এ ছাড়া এক র্যাব সদস্য গুরুতর আহত হন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে ২০২৩ সালে আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে ৬৪ জন সাধারণ রোহিঙ্গা ও রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডার এবং চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ক্যাম্প ও ক্যাম্প-সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব এ পর্যন্ত ১১০ জন আরসা সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয়। তাদের কাছ থেকে ৫১.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ১২টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৩টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৩ রাউন্ড গুলি কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, চারটি আইডি ও ৩৫টি ককটেল জব্দ করা হয়।

তুমব্রু সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ
উখিয়ার পাশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনা পাড়া জিরো লাইন এলাকায় স্থল মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ১০টার দিকে এ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে তুমব্রু বাজার। তবে এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ধারণা, চোরাইপণ্য আনতে বা মিয়ানমার সীমান্তরীদের টহল দলের সদস্যদের পা লেগে এ মাইন বিস্ফোরিত হয়েছে। স্থল মাইনটি মিয়ানমার বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বসিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা জানান, বর্তমানে এ পয়েন্টটি বিদ্রোহী আরাকান আর্মির দখলে। বিজিপির কাছ থেকে দখলে নিয়ে সেখানে আরাকান আমি নিয়মিত টহল দিচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement