দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন্সের’ নতুন মিউটেশন শনাক্ত
- ১৫ মে ২০২৪, ০২:০২
দেশে বিরল রোগ ‘উইলসন্সের’ নতুন দু’টি মিউটেশন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির নিউরোলজি ও অ্যানাটমি বিভাগের যৌথ গবেষণায় নতুন এ ধরন উঠে এসেছে। এ ছাড়াও এই বিরল রোগের চিকিৎসা টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউতেই হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জাগো নিউজ।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএসএমএমইউ আয়োজিত ‘বাংলাদেশী উইলসন্স রোগীদের মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন এবং এর স্নায়বিক উপসর্গ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। এতে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা: আহসান হাবিব হেলাল এবং অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: লায়লা আনজুমান বানু।
তিনি বলেন, গবেষণায় আমাদের মোট রোগীর সংখ্যা ছিলেন ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ২৮ জন এবং নারী ২২ জন। তাদের ছয়জনের মধ্যে তিনটি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে দু’টিই বাংলাদেশে নতুন। তাদের টার্গেট জিন থেরাপির মাধ্যমে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা চলছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ৩০ হাজার জনের মধ্যে একজন উইলসন্স রোগে আক্রান্ত। সেই হিসাবে রোগীর সংখ্যা হবে ছয় হাজারের মতো। বিএসএমএমইউতে এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ২০০ জনের চিকিৎসা দিয়েছি। কারো মধ্যে রোগটি শনাক্ত হলে তাকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। একজন রোগীর মাসে দেড় হাজার টাকার মতো ওষুধের প্রয়োজন হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে সারা জীবন ভালো থাকার সুযোগ রয়েছে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই চিকিৎসক আরো বলেন, পরিবারের একজনের যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে অন্য সদস্যদের পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।
এ সময় ডা: আহসান হাবিব হেলাল বলেন, এই গবেষণায় নিউরোলজি বিভাগের মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার ক্লিনিক এবং অন্তঃবিভাগ থেকে রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোগী থেকে তিন মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করে অ্যানাটমি বিভাগের জেনেটিক ল্যাবে পাঠিয়ে এনালাইসিস করা হয়েছে। আমাদের রোগীদের বয়সসীমা ছিল ৯ থেকে ৬০ বছর। অধিকাংশ রোগী পাওয়া গেছে ৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং এর সংখ্যা ছিল ৪৩ জন। গবেষণায় প্রথম জেনারেশনের আত্মীয়দের মধ্যে আক্রান্ত ছিলেন সাতজন। এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছে ২৬ শিশুকে।
রোগের উপসর্গ প্রসঙ্গে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা যেই রোগীগুলো পেয়েছি, তাদের মধ্যে ভেতরে ঢোক গিলতে সমস্যা ছিল ২৭ জনের, হাত-পায়ের কম্পন ছিল ২৮ জনের, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া ছিল ২১ জনের, অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানো সমস্যা ছিল ১৪ জনের, অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা ছিল ১১ জনের, নৃত্যের মতো অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া ছিল চারজনের।
রোগটি কাদের হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা-মা দু’জনেরই যদি এই রোগের জিন থাকে, তাহলে সন্তানেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ জন্য আমরা নিকটাত্মীয়র মধ্যে বিয়ে না করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা: দীন মো: নূরুল হক। এ সময় প্রো-ভিসি (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ডা: আতিকুর রহমান, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা: মনিরুজ্জামান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা: আবু নাসার রিজভীসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পারিবারিকভাবে উইলসন্স ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া চারজনকে দেখানো হয়।