ফরিদপুরে একের পর এক বাড়িতে অজ্ঞান করে দুর্ধর্ষ চুরি

ফরিদপুরে খাবারের মসলা বা লবণের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির সবাইকে অজ্ঞান করে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। শহরের শোভারামপুর ও ডোমরাকান্দিতে গত কয়েক দিনে তিনটি বাড়িতে এমন ঘটনার খবর জানা গেছে। এ ঘটনায় অসুস্থ প্রায় ২০ জনকে শহরের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, শহরের উপকণ্ঠে ডোমরাকান্দিতো। পরপর তিন রাতে তিনটি বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার মৃত নেছারউদ্দিনের ছেলে মো: আবুল মণ্ডল (৪৫) জানান, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তার বাড়ির সদস্যরা সকালের খাবার খাওয়ার মিনিট দশেক পরে অসুস্থ হয়ে যান। এরপর তাকেসহ তার স্ত্রী শিরিনা বেগম (৩৫), ছেলে সিয়াম (১৬) ও মেয়ে সিনহাকে (১২) ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবুল মণ্ডল বলেন, সকালে বাড়ির পাশে ধানক্ষেতে গেলে সেখানে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলাম। এতে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বাড়ি এসে দেখি আমার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। এরপর আশপাশের লোক ডাক দিলে তারা আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। একরাত হাসপাতালে ভর্তি থেকে শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে ফিরে আসি।
শিরিনা বেগম (৪০) জানান, সকালে রান্না করতে যেয়ে দেখি লবণে হলুদের মতো রঙ লেগে আছে। আর কেমন যেন পাউডারের মতো মেশানো। তবে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেইনি। ভেবেছিলাম শিশুরা লবণ দিয়ে আম মাখিয়ে খেয়েছে কিংবা আটা মাখিয়েছে হয়তো।
আবুল মণ্ডল বলেন, গত বছরও এ সময় আমার গরু চুরি হয়েছিল। মনে হচ্ছে এবারো তারা আমার তিনটি গরু চুরির চেষ্টা করেছিল। তবে আমরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে আত্মীয় স্বজনেরা বাড়িতে এসে পড়ায় তারা সফল হতে পারেনি। এ ঘটনায় আবুল মণ্ডল কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
এ দিকে এর পরের রাতে ওই গ্রামের ওমর আলী (৪৭) নামে এক চা দোকানির বাড়িতে লুট হয়। তিনি বলেন, একদল ডাকাত বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে মারধরের পর নগদ টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে নিয়ে যায়। দু’জন ডাকাত প্রথমে এসে দরজা ভাঙার চেষ্টা চালালে তাদের সাথে আমার ধস্তাধস্তি হয়। তাদের দলে ১০ জনের মতো ছিল। সবাই লম্বা গড়নের, কমলা রঙের গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরা ছিল। চারজন ছিল মুখোশ পরা।
এ ছাড়া দু’দিন আগে ওই গ্রামে সাজেদা বেগম (৫০) নামে এক নারীর বাড়িতে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। তারা জানালার গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সাজেদার হাত-পা বেঁধে রেখে টাকা-পয়সা ও সোনার চেইন নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সাজেদা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ দিকে শহরের শোভারামপুরে গত শুক্রবার সকালে বাড়ির রান্না খাবার খেয়ে দু’টি পরিবারের ১৫ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে যান। তাদের ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একটি পরিবারের বাড়িতে রাতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ছয়-সাত ভরি স্বর্ণ ও নগদ লাখ টাকা খোয়া গেছে। ওই গ্রামের হৃদয় কুমার শীল (২২) জানান, শুক্রবার সকালে তার কাকা সুকুমার শীলের (৭০) বাড়িতে রান্না করা খাবার খেয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেন। তবে তার আগে শুক্রবার রাতে সুকুমার শীলের বাড়িতে নগদ টাকা ও মালামাল চুরি হয়ে যায়।
হৃদয় জানান, শুক্রবার রাতে তার কাকা সুকুমারসহ পাশের উত্তম শীল (৪৫) ও কার্তিক শীলের (৫৪) বাড়ির রান্না ঘরে হলুদের সাথে কিছু মিশিয়ে রেখেছিল চোরেরা। তবে অন্য দুই বাড়ির লোকেরা উপোস থাকায় তাদের বাড়িতে রান্না হয়নি। এ ছাড়া শোভারামপুর মহল্লার নিরোদ মণ্ডল (৫২) নামে আরো এক ব্যক্তির বাড়িতে এভাবে খাবারের উপকরণের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে রাখা হয়। এরপর রান্না করা খাবার খেয়ে শুক্রবার সকালে নিরোদ মণ্ডলের বাড়ির প্রায় ১০ জন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বলেন, এমন একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অন্য ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি থানায়।