১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ৪ দিন ধরে অন্ধকারে মিরসরাই

-


চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চার দিন ধরে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কালবৈশাখী ঝড়ো বাতাসে গাছপালা ভেঙে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ার পাশাপাশি খ্ুঁটিও ভেঙে গেছে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীনে থাকা প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে জনসাধারণকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো ৫-৬ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, পোলট্র্রি ও গরুর খামার, বাসাবাড়ির বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে হঠাৎ শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড় প্রায় দেড় ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে ১৭৫টি, ১৫৪০ স্পটে তার ছিঁড়েছে, ক্রসআর্ম ভেঙেছে ১৫৯টি। মিরসরাই পৌরসদর, বারইয়ারহাট পৌরসভাসহ মহাসড়কের পাশর্^বর্তী বড় কয়েকটি বাজারে বিদ্যুৎ দেয়া হলেও পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো ৫-৬ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে লোকবল সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে ছিঁড়ে যাওয়া তার লাগানো, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার পরিবর্তনে বেশি সময় লাগছে বলে জানা গেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে থাকা মাছ, গোশতসহ যাবতীয় পণ্যসামগ্রী বরফ গলে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি উত্তোলন করতে না পারায় ভোগান্তিতে রয়েছে সর্বসাধারণ।

বিদ্যুৎ না থাকায় পোলট্রি ও গরুর খামারেও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাম্য হাটবাজারের দোকান ও বিপণিবিতানগুলো সন্ধ্যার আগে বন্ধ করে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে করে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুৎ না থাকাতে পুরো উপজেলায় কদর বেড়েছে মোমবাতির। ৫ টাকার মোমবাতি ১০ টাকা আর ১০ টাকার মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। সঙ্কট দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে বাড়তি দাম।
উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নে পূর্ব মলিয়াশ এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা মাছ-গোশতসহ সব ধরনের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। কলেজ শিক্ষার্থী প্রন্নয় চৌধুরী বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে থাকা গাছপালা আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষ নিজ উদ্যোগে কেটে দিয়েছে। তারপরও চার দিন ধরে আমরা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছি।

খইয়াছড়া ইউনিয়নের দুয়ারু এলাকার বাসিন্দা মো: আরশেদ বলেন, গত সোমবার দুপুরে ধমকা হাওয়ায় আমার এলাকায় দু’টি বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে, যা মেরামত করা অল্প কিছু সময়ের ব্যাপার। কিন্তু অজানা কারণে আজ চার দিন হলেও কোনো ধরনের মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। টানা চার দিন বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকটা দূর্বিষহ জীবন পার হচ্ছে এই এলাকার তিন গ্রামের শতাধিক পরিবারের। বিদ্যুৎ না থাকায় স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পালগ্রামের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানের দু’টি ফ্রিজের সব আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ আসবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সন্ধ্যার আগে দোকান বন্ধ করে ফেলতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম মো: হেদায়েত উল্লাহ বলেন, সব লাইন মেরামত করতে আরো ৫-৬ দিন লেগে যেতে পারে। সীতাকুণ্ড জোনাল অফিসের ডিজিএম পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, দুয়েক দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement