রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই সুস্থ কোষকে নষ্ট করে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ মে ২০২৪, ০০:০০
বিরল একটি রোগের নাম লোপাস। শরীরে তৈরি হওয়া যে অ্যান্টিবডি শরীরের রোগ প্রতিরোধ করে সেই অ্যান্টিবডিই লোপাস আক্রান্ত রোগীর সুস্থ কোষকে নষ্ট করে দিয়ে তাকে অসুস্থ করে দেয়। লোপাস হলে শরীরে দেখা দেয় জ্বালা-পোড়া, ব্যথা। এই রোগ হলে কস্টিকোস্টারয়েড, ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে সুস্থ থাকা যায়। মেয়েদের রোগটি হলে চোখের নিচে দুই গালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রজাপতির মতো দাগ পড়ে। তবে লোপাস হলে মুখের অন্যান্য অঙ্গেও র্যাশ উঠতে পারে। হাতে, ঠোঁটে, মাথার তালুতে, কানে, পিঠেও র্যাশ উঠতে পারে।
রোগটির বিরুদ্ধে সচেনতা গড়ে তোলার জন্য প্রতি বছর ১০ মে বিশ্ব লোপাস দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশেও আজ লোপাস ক্লিনিকের উদ্যোগে সচেতনতা কর্মসূচি পালন করা হবে। এটি একটি বিরল রোগ। ক্রনিক ডিজিজ নামেও পরিচিত এটা।
লোপাস একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ নেকড়ে। নেকড়ে যেমন হঠাৎ দ্রুতগতিতে আক্রমণ করে শিকারকে তেমনি লোপাস আকস্মিকভাবেই আক্রমণ করে ত্বক, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, রক্তসঞ্চালন তন্ত্রকে এবং মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। রোগটি সিস্টেমিক লোপাস ইরাইথেমেটোসাস বা এসএলই রোগ হিসেবেও পরিচিত।
পরিসংখ্যান থেকে চিকিৎসকরা বলছেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে ৯ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে রোগটিতে। তারা ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়। সানলাইট, কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি, অ্যাপসটেইনবার ভাইরাসের সংক্রমণ এবং শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থের প্রকাশ ঘটলে শরীরে লোপাসে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, জেনেটিক এবং পরিবেশগত কিছু উদ্দীপকের কারণে শরীরে অটো ইমিউন সিস্টেম তথা লোপাস রোগটি গড়ে ওঠে। অতিরিক্ত চাপ অতি বেগুনি রশ্মিতে বেশি অবস্থান, ধূমপান করে লোপাস হতে পারে। লোপাস হলে হাত ও পা ফুলে যাওয়া, জ্বর, অবসন্নতা, ত্বকে ক্ষত, র্যাশ, রক্ত শূন্যতা, বুকে ব্যথা, আলোর সংবেদনশীলতা, চুল পড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।
বিশিষ্ট রিওম্যাটোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, লোপাস নির্মূল করা যায় না। এটা শুধু ওষুধ প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যায়। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে লোপাস আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে লোপাস ক্লিনিকে এ রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। সাধারণত মেডিসিন ও রিউমাটোলজির চিকিৎসকরা লোপাসের চিকিৎসা করে থাকেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘লোপাস শরীরের যেকোনো অংশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। রোগটি হলে ত্বক (স্কিন) জোড়া (জয়েন্ট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে যা অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত। এই অ্যান্টিবডিই দেহে থাকা অথবা বাইরে থেকে আসা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য জীবানুকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু লোপাসের অ্যান্টিবডি শরীরের সুস্থ কোষকেও ধ্বংস করে দিয়ে ব্যক্তিকে অসুস্থ করে তোলে। কারণ এই অ্যান্টিবডি ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণু এবং সুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। এই কারণেই সব ধরনের জীবাণুসহ লোপাস শরীরের সুস্থ কোষও ধ্বংস করে দেয়। লোপস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। রোগটি হলে সারাক্ষণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হয়। ভালো চিকিৎসা পেলে রোগটি নিয়ে সারাজীবন সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকা যায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা