অসুস্থ মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই অস্ত্রোপচার করত মিল্টন সমাদ্দার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
প্রতারণা ও নানা অনিয়মে গ্রেফতার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা মিল্টন সমাদ্দার মানুষের হাত-পা কেটে নিজেই অস্ত্রোপচার করত। তিনি ৯০০ লাশ দাফন করেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালালেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১০০ লাশ দাফনের কথা জানিয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ কথা বলেন।
এ দিকে মিল্টন সমাদ্দারকে আবারো রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। মানব পাচার মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
ডিবি প্রধান হারুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরের কোনো অংশ পচে যেত, সে অংশগুলো সে ছুরি ও ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলত। এমন বেশ কয়েকজন বৃদ্ধের সে হাত, পা ও আঙুল কেটে ফেলে। সেসময় তাদের কান্না, যন্ত্রণা ও রক্ত দেখে মিল্টন পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করত। সে কখনোই অসুস্থ ব্যক্তিদের কোনো হাসপাতালে নিত না। মিল্টনের অস্ত্রোপচার কক্ষে শুধু কয়েকটা ছুরি ও ব্লেড পাওয়া গেছে। এখানে সে নিজেই অস্ত্রোপচার করত।
মিল্টনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো এক কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে বলে জানান হারুন অর রশীদ। সে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষদের দাফন, বৃদ্ধ, বাকপ্রতিবন্ধী, অসহায় মানুষদের আশ্রয়ের কথা বলে টাকা সংগ্রহ করত। কবর দেয়ার সংখ্যা যত বেশি, টাকা সংগ্রহ তত বেশি হতো।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, ৯০০ লাশের দাফন করা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মিল্টন জানায়, সে ১০০ জন মানুষের লাশ দাফন করেছে। তবে এর তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি।
মিল্টন সমাদ্দার একজন মাদকাসক্ত ও সাইকোপ্যাথ মানুষ। টর্চার সেলে সে মানুষকে পিটিয়ে নিস্তেজ করত বলে জানান ডিবি প্রধান। ডিবি আরো জানায়, সে কিভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হলেন, তা বোধগম্য নয়।
প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে গত ১ মে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মিল্টন সমাদ্দার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। জালিয়াতির মাধ্যমে চিকিৎসক সেজে মৃত ব্যক্তির সনদ দেয়াসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মিরপুর থানার পুলিশ।
মিল্টনের দাবি, মিরপুরে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে সে। সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। মিল্টন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে প্রচার চালান। এসংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেসবুকে তাকে অনুসরণ করেন এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ।
সম্প্রতি মিল্টনের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিল। মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। এরই মধ্যে তার সাথে কাজ করা এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজন তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় প্রতারণার মাধ্যমে জালিয়াতি, মানবপাচার এবং মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশসহ ভুক্তভোগীরা।
মিল্টন সমাদ্দার আবারো রিমান্ডে
মিল্টন সমাদ্দারকে। মানবপাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
এর আগে গত ২ মে প্রতারণার মাধ্যমে মৃত্যুসনদ জালিয়াতির মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। সেই রিমান্ড শেষে গতকাল তাকে আদালতে হাজির করা হয়। মানব পাচার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শিকদার মহিতুল আলম।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর বিকেলে শুনানি শেষে চার দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা