১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাঙ্গাবালীতে ৬ কিমি. সড়কের হাজারো গাছ নিধন

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলছেন পরিবেশবিদরা
-

‘পাঁচ তলাতে শান্তি নাইরে শান্তি আছে গাছ তলায়.....’ এই লোকগানের মতই অসহনীয় গরমে গাছতলাতে একটু প্রশান্তি খোঁজেন মানুষ। ঠিকানা খুঁজে নেয় পাখ-পাখালি। কিন্তু মানুষের মাথার ওপর একটু শীতল পরশ দেওয়া আর পাখ-পাখালিদের আশ্রয় দেওয়া গাছগুলোকেই যখন কাটা হয়, তখন আর কি প্রত্যাশা থাকবে প্রকৃতির কাছে?
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর ৬ কিলোমিটারের সড়কটি এখন গাছশূন্য হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক কাটা পড়ছে ছায়া বৃক্ষগুলো। সামাজিক বনায়ন বিধিমালার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে সড়কের দু’পাশজুড়ে ছায়া দেওয়া ২৪ বছরের পুরানো এক হাজার ৩৭৫টি গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে।
বন বিভাগের স্থানীয় অফিসের সূত্র বলছে, সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় ২৪ বছর আগে রাঙ্গাবালী বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়ক থেকে উপজেলা পরিষদ হয়ে গন্ডাদুলা এম এইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে এই গাছগুলো রোপন করা হয়েছিল। সড়কটির দু’পাশে মেহগনি, রেন্টি, আকাশমনি, অর্জুন, খইয়া, বাবলা, চাম্বুল, শিশু, কড়াই, ঝাউ, পেয়ারা ও কাঠাল প্রজাতির এ গাছ রোপণ করা হয়। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী ২০ বছর পূর্ণ হলেই এসব গাছ বিক্রি করার বিধান রয়েছে। সেই নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে ফলদ-বনজ প্রজাতির এক হাজার ৩৭৫টি গাছ নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে বিক্রির জন্য গত ১৩ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার ২০০ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মো. বশির মিয়া গাছ কাটার কার্যাদেশ পান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তাপদাহ চলাকালে পুরো এপ্রিল মাসজুড়েই গাছ কাটা চলে। গাছ কাটা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এভাবে চললে চলতি মে মাসের ১০-১৫ দিন পর সব গাছ কাটা শেষ হবে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম নেতা গ্রামের আব্দুল মালেক ভূইয়া বলেন, দু’পাশের এ গাছগুলো সড়কটিকে ছায়া দিয়ে রাখতো। ছায়া দেওয়া এসব গাছের কোনটিই রাখা হচ্ছে না। ছোট-বড় সব গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। বন বিভাগের গাছতো নিয়েছেই, আমাদের অনেকের লাগানো ব্যক্তিমালিকানার গাছও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এই সড়কে গাছ থাকলে ছায়ায় চলাফেরা করতে পারতাম। গাছ না থাকার কারণে রোদের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। ওই ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আব্দুর রব বলেন, ‘এই রাস্তায় যখন গাছ ছিল, ঠান্ডা বাতাস লাগতো। গাছ কেটে ফেলতেছে, এখন রোদে চলা যায় না। পথচারীরা গাছের ছায়া পাচ্ছে না। গাছগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পাখিগুলো আশ্রয় হারাচ্ছে।’
বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জ অফিসার অমিতাভ বসু নয়া দিগন্তকে বলেন, দারিদ্র বিমোচন করতে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী উপকারভোগীদের সম্পৃক্ত করে সমিতির মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের গাছ রোপনের ২০ বছর পর কেটে বিক্রি করার বিধান রয়েছে। বিক্রি করা এই অর্থ বন অধিদপ্তর ১০ শতাংশ, ভূমি মালিক সংস্থা ২০ শতাংশ, উপকারভোগী ৫৫ শতাংশ, পুনরায় বাগান করার জন্য ১০ শতাংশ এবং ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ৫ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, যে সড়ক থেকে গাছ কাটা হচ্ছেÑসেই সড়কে পুনরায় ১০ হাজার গাছ রোপন করা হবে।

তবে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা রক্ষার নামে গাছ কাটার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, বিধিমালার এই নিয়ম এখন পরিবর্তন প্রয়োজন। এমন নিয়ম করতে হবে যে গাছ কেটে উপকারভোগীদের আর টাকা দেওয়া হবে না। গাছের পরিচর্যা কিংবা দেখাশোনা করার দায়িত্বে থাকা উপকারভোগীদের অন্য ধরণের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। গাছ কাটা পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মো. শাহরিয়ার জামান জানান, উপকূলীয় রাঙ্গাবালী এমনিতেই খরা, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততাÑএসবের সম্মুখীন। সুতরাং সামাজিক বনায়নের যে গাছগুলো বন বিভাগ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা পরিবেশগত ক্ষতির সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই না। বন বিভাগই যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা কার প্রতি আস্থা রাখবো। আমি মনে করি বন বিভাগ এমন সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুত সরে আসবে। তিনি আরও জানান, সামাজিক বনায়নের সুফল ভোগ করে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজন। এর সুফল ভোগ করে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। সুতরাং এ গাছগুলো কেটে ফেলা বা সরিয়ে ফেলা মানে ওখানকার তাপমাত্রা এমনিতেই বেড়ে যাবে। এছাড়া ১৫-২০ বছরের পুরনো গাছ যদি কেটে ফেলা হয়, সে অবস্থায় আবার ফিরে আসতে ১৫-২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
অবসরে গেলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ জিয়াউল করিম জাতিসঙ্ঘের আরো জোরদার সহযোগিতার আহ্বান ঢাকার আওয়ামী লীগ একটি পাপিষ্ঠ দলের নাম : মাসুদ সাঈদী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা : কুলাউড়ায় আ’লীগ নেতা আজাদ গ্রেফতার খুনকে অপমৃত্যু হিসেবে রেকর্ড করলেই ওসি দায়ী : ডিএমপি কমিশনার সিরিয়াকে বশে রাখতে দামেস্কের কাছে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চায় ইসরাইল ভারতের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে চুক্তিগুলো বাতিল সহজ নয় : রিজওয়ানা হাসান গৌরনদীতে মাদককারবারির কারাদণ্ড ভারতের আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ, ভৈরবে বিএনপির পথসভা ওমানে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে প্রবাসীর মৃত্যু অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলো : নাহিদ ইসলাম

সকল