১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাসায়নিকে আম পাকানো থামছে না সাতক্ষীরায়

৬ দিনে জব্দ করা ৩৭ টন আম ধ্বংস
-

সাতক্ষীরার হিমসাগর, ল্যাংড়া, ও গোবিন্দভোগ আমের সুখ্যাতি রয়েছে সারা দেশব্যাপী। দেশের গোণ্ডি পেরিয়ে সাতক্ষীরার আম রফতানি করা হয় ইউরোপসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। আমের এই সুখ্যাতি ধরে রাখতে এখনো আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেনি জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অপরিপক্ব গোবিন্দভোগ আম পেড়ে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করার চেষ্টা করছে। গত ছয় দিনে জেলার কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭ হাজার ৪০০ কেজি আম জব্দ করে নষ্ট করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
অপরিপক্ব আম পাড়া বন্ধ করতে গত ২৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর আমের মুকুল দেরিতে এসেছে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও গোবিন্দভোগ, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম পরিপক্ব অবস্থায় উপনীত হয়নি। জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সভা করে আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করবে। সে মোতাবেক গাছ থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করতে হবে। অসদুপায় অবলম্বনে পাকানো অপরিপক্ব আম খাদ্য হিসেবে গ্রহণে ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অসদুপায় উপায় অবলম্বনে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি জারি করা ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও থেমে নেই অপরিপক্ব গোবিন্দভোগ আম পেড়ে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাত করার অপচেষ্টা। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র নির্দিষ্ট সময়ের আগেই অপরিপক্ব আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করার তৎপরতা লিপ্ত রয়েছে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকে পাকানো হচ্ছে এসব আম। জনস্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। গত সোমবার হতে বৃহস্পতিবার ছয় দিনে পৃথক অভিযানে জেলার কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৭ হাজার ৪০০ কেজি বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো অপরিপক্ব গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জব্দকৃত এসব আম জনসমক্ষে ধ্বংস করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আকাশের নেতৃত্বে শহরের সুলতানপুর পিএন স্কুল মাঠে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে এসব আম বিনষ্ট করা হয়।

একই দিনে দেবহাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপা রানী সরকার উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের বহেরা এলাকা থেকে এবং গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আসাদুজ্জামান উপজেলার সখিপুর এলাকায় পৃথক অভিযানে ১০ হাজার কেজি রাসায়নিক মিশিয়ে পাকানো গোবিন্দভোগ জাতের আম জব্দ করেন। পরে জব্দকৃত আম সখিপুর ফুটবল মাঠে প্রকাশ্যে গাড়ির চাকায় পিষে বিনষ্ট করা হয়।
এ দিকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আজাহার আলী উপজেলার কালীবাড়ি বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রায় ৯ হাজার কেজি গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেন। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরুর পূর্বে মালিকপক্ষ পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত বুধবার ভোর রাতে পৃথক অভিযানে কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা এলাকা থেকে কেমিক্যালে পাকানো ৩০০০ কেজি অপরিপক্ব আম জব্দ করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশের উপস্থিতিতে সেগুলো বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে জনসমক্ষে গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে ধ্বংস করা হয়।
অপর দিকে গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে দেবহাটা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতীশ সরকার সদর উপজেলার আলিপুর চেকপোস্ট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যে পাকানো ছয় মেট্রিক টন গোবিন্দভোগ আম জব্দ করেন। পরে সেগুলো গাড়ির চাকায় পিষে বিনষ্ট করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে কেমিক্যালে পাকানো ৪০০ কেজি অপরিপক্ব আম ধ্বংস করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement