১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
পঞ্চপল্লীতে দুই ভাই হত্যার প্রতিবাদ

ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ : টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি : আহত ২০

-


ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের কথিত অভিযোগে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় মহাসড়কে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ প্রায় ২০ জনের মতো আহত হয়েছেন। পুলিশ পাঁচ ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হওয়ার পরে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।

জানা গেছে, পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের কথিত অভিযোগের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মধুখালী রেলগেটে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মধুখালী ঈদগাহের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ঈদগাহ ময়দানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তারা মিছিল সহকারে মহাসড়ক দিয়ে ঘটনাস্থল পঞ্চপল্লী অভিমুখে রওনা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের বাধায় বিক্ষোভকারীরা খণ্ড খণ্ড হয়ে মিছিল করতে থাকেন। একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা মহাসড়কের মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নোয়াপাড়ার মোড়, মাঝিবাড়ি, আড়কান্দি ও বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। আড়কান্দিতে বিক্ষোভকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে এবং ঘোপঘাটে টায়ারে ও গাছের গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে উঠে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে থাকে। নওয়াপাড়ার মোড়ে একটি ইটভর্তি ট্রাক সড়কের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে রেখে বিক্ষোভ করা হয়।

খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার গিয়ে সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদ জানান। জেলা প্রশাসক এ ঘটনারও তদন্তের আশ্বাস দেন। বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া না দিলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে কামারখালীর উজানদিয়া গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে সোহেল রানা (৪৫) নামে একজনকে এবং বিকেলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন সদস্য ওসমান (২৩), ফয়জুর (৩৭), ইবরাহিম (৪২) নামে তিনজনকে ফরিদপুরের বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
এদিকে, বেলা সোয়া ২টার দিকে প্রথমে যান চলাচলের চেষ্টা করলে আবার মরিচের বাজারে মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় আড়কান্দিতে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি রাস্তা থেকে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে যান চলাচল করতে গেলে সেখানে মহাসড়কের ঢালে লুকিয়ে থাকা বিক্ষুব্ধরা ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে হটিয়ে দেয়।

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন বলেন, ডুমাইনের পঞ্চপল্লীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুখালী উপজেলার পাইলট স্কুল থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। কোথায় বুঝিয়ে শুনিয়ে, কোথায়ও টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। এ কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ এমদাদ হুসাইন বলেন, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো ব্যক্তি হতাহত কিংবা জানমালের ক্ষতি সাধনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এদিকে এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৮টায় জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চপল্লীতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ শ্রমিকদের স্কুলের কক্ষে আটকে বেদমভাবে পিটিয়ে আপন দুই ভাইকে হত্যা ও আরো তিনজনকে গুরুতর আহত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে স্কুলের পাশে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের কথিত অভিযোগের গুজব ছড়িয়ে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে হতাহতদের প্রায় ৬ ঘণ্টা ওই কক্ষে আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে থানায়। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement