ব্যর্থতার দায়ে ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৯
- ইসরাইলি গণহত্যাকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : হামাস
- খান ইউনুসের নাসের হাসপাতাল আরো ৩ গণকবর
- ইসরাইলি হামলায় নিহত মায়ের পেট থেকে জীবিত উদ্ধার শিশু
গত বছর ৭ অক্টোবর গাজা থেকে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলা রুখতে ব্যর্থ হওয়ার দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আহারন হালিভা। তার একজন উত্তরসূরি বেছে নেয়ার পর তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স-আইডিএফ। বিবিসি, আনাদোলু ও আলজাজিরা।
নিজের পদত্যাগ পত্রে হালিভার লেখেন, তিনি স্বীকার করছেন, তার গোয়েন্দা অধিদফতর তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ওই হামলার পর এই প্রথম দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে সরে দাঁড়ালেন। বিবিসি জানায়, ইসরাইলে হামাস হামলা করতে পারে, একাধিক স্থান থেকে এমন সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের কেউ ওই সতর্কবার্তা আমলে নেয়নি।
৭ অক্টোবর ভোরে হামাস প্রথমে গাজা থেকে ইসরাইলের দিকে বৃষ্টির মতো রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তাদের দিশেহারা করে ফেলে। তারপর হাজারো হামাস যোদ্ধা সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলের জনবসতি, সামরিক ঘাঁটিতে অভিযান চালায়। সেদিন হামাসের অভিযানে ১২শ’র বেশি ইসরাইলি ও বিদেশী নাগরিক নিহত হয়। তা ছাড়া গাজায় বন্দী করে নিয়ে আসা হয় আরো ২৫৩ জনকে। সেদিনই তীব্র আক্রোশে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৫১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ৮৪ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজা এখন নরকে পরিণত হয়েছে।
নাসের হাসপাতাল আরো ৩ গণকবর : গাজার খান ইউনুস অঞ্চলের আল নাসের হাসপাতাল চত্বরে আরো তিনটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী। এসব গণকবর থেকে আরো ৭৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর আগে আল নাসের হাসপাতাল চত্বর থেকে ১৮০টি লাশ উদ্ধার করে ফিলিস্তিনি নাগরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী। শনিবার এই লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ খান ইউনুস থেকে জানিয়েছেন, হাসপাতালের আঙিনা থেকে ১৮০টি লাশ উদ্ধার করেছেন বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী ও চিকিৎসাকর্মীরা। নিহতদের সবাইকে গণকবর দিয়েছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। লাশগুলোর মধ্যে বয়স্ক মহিলা, শিশু ও যুবক রয়েছেন।
গণহত্যাকে সুরক্ষা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে হামাস। এমনকি মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইল গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে বলেও জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার করে ইসরাইল গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বলে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ গত শনিবার জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের ভেটো কার্যকরভাবে তেলআবিবের কর্মকাণ্ডের রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করছে। আনাদোলুর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রতারণামূলক, যদিও দেশটি বলে, তারা বেসামরিক লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না, তবে এটি তাদের একটি কৌশল। গাজায় নিহত সমস্ত বেসামরিক নাগরিক, হাজার হাজার শহীদ, মার্কিন অস্ত্র, মার্কিন রকেট, মার্কিন রাজনৈতিক সুরক্ষায় নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর অর্থ কী? এর মানে হলো- গাজায় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্র পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পূর্ণ সদস্যপদে মার্কিন ভেটো এটিই প্রমাণ করে যে- ওয়াশিংটন ইসরাইলি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের বিরোধিতা করছে।
এ দিকে হানিয়াহ রাফাহ শহরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি সমস্ত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশকে, আমাদের মিসরের ভাইদের, আমাদের তুরস্কের ভাইদের, আমাদের কাতারের ভাইদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে (ইসরাইলি) আগ্রাসন রুখতে এবং রাফাহ শহরে অভিযান প্রতিরোধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং সেইসাথে গাজা থেকে (ইসরাইলি সেনাবাহিনীর) সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজায় হামলার সমাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধের কথা বলতে গিয়ে হানিয়াহ বলেন : যদি জায়নবাদী শত্রু রাফাহতে প্রবেশ করে, ফিলিস্তিনি জনগণ সাদা পতাকা উত্তোলন করবে না। রাফাহর প্রতিরোধ যোদ্ধারা নিজেদের রক্ষা করতে এবং আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত। কেন তারা ইসরাইলের সাথে আলোচনা করতে রাজি হয়েছিলেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে হানিয়াহ বলেন, আমরা আলোচনায় রাজি হয়েছিলাম, কিন্তু এই শর্তে যে- ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর হামলা বন্ধ করা হবে।
আমাদের শর্ত হচ্ছে- এই আলোচনার ফলে অবশ্যই একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, সম্পূর্ণভাবে সৈন্য প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তন এবং বন্দিবিনিময় চুক্তি হতে হবে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দাখিল করা কয়েক ডজন প্রস্তাব নিয়ে এ পর্যন্ত সমস্ত আলোচনা সত্ত্বেও ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়নি বলে জানিয়ে হানিয়াহ বলেন, ইসরাইল যা চায় তা হলো- বন্দীদের ফিরিয়ে নেয়া এবং তারপর গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করা। এটা সম্ভব নয়।
জীবিত উদ্ধার শিশু : ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজার রাফাহ নগরীতে ইসরাইলের হামলায় এক অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তবে তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে পেরেছেন চিকিৎসকরা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ খবর জানিয়েছেন। শনিবার রাতে রাফাহতে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ১৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, দু’টি বাড়িতে এ হামলা হয়। নিহতদের মধ্যে একটি পরিবারের ১৩ শিশু রয়েছে। প্রথম বাড়িতে হামলায় শুকরি আহমদ জাওদা নামের এক যুবক, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সাবরিন আল- সাকানি ও তাদের এক মেয়ে নিহত হন। তবে অস্ত্রোপচার করে নিহত মায়ের পেটে থাকা সন্তানকে বাঁচিয়েছেন রাফাহর কুয়েতি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মোহাম্মদ সালামা নামে এক চিকিৎসক শিশুটির দেখভাল করছেন। ১ দশমিক ৪ কেজি ওজনের এই কন্যাশিশুকে জরুরিভাবে অস্ত্রোপচার করে মায়ের পেট থেকে বের করা হয়।
তার মা মৃত্যুর সময় ৩০ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। হাসপাতালে শিশুটিকে অন্যান্য শিশুদের সাথে একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তার বুকে টেপ লাগিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে লেখা, ‘শহীদ সাবরিন আল-সাকানির সন্তান। শিশুটির চাচা রামি আল-শেখ জানিয়েছেন, হামলায় নিহত হওয়া তার বোন মালাক শিশুটির নাম রাখতে চেয়েছিল রুহ। যার বাংলা অর্থ আত্মা। তিনি বলেন, পৃথিবীতে বোন আসছে ভেবে খুবই খুশি ছিল মালাক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা