১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তীব্র তাপদাহে বোরো ধান নিয়ে শঙ্কা

বিভিন্ন ফসল রক্ষায় নানা পরামর্শ
-

তিন সপ্তাহ ধরে সারা দেশে চলছে তাপদাহ। যশোর, চুয়াডাঙ্গাসহ কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরসহ বিভিন্ন সূত্র বলছে, পুরো এপ্রিল মাসেই থাকবে এ তপদাহ। তীব্র তাপদাহ তথা হিটশকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বছর তিনেক আগেও হিটশকে হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধানে চিটা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন তারা।
আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে কৃষিবিদরা বলছেন, তাপদাহে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এই মুহূর্তে বিভিন্ন ফসল রক্ষায় কৃষকের করণীয় কী, তা নিয়েও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় হাওরাঞ্চলে ব্যাপক বোরো ধান চাষ হয়েছে। ক্ষেতে ক্ষেতে ধানের শীষ সোনালি রঙ ধারণ করতে শুরু করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ধানের ব্যাপক ফলন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যেসব এলাকায় ধান পেকেছে সেখানে তাপদাহ থাকলেও তেমন সমস্যা হবে না। ধান দ্রুত কেটে ফেলাই শ্রেয়। বর্তমানে বোরো ধান মাঠে রয়েছে। হাওরাঞ্চলসহ কিছু এলাকায় ধান পাকলেও দেশের বেশির ভাগ এলাকায়ই ধান থোড় অবস্থায় রয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে ধানে ফুল ও কিছু এলাকায় দুগ্ধ আর ক্ষীর অবস্থায় আছে। বর্তমানে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই তেমন না থাকলেও দীর্ঘমাত্রায় তাপদাহে ধান নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা ধরার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ধানে ফুল অবস্থায় পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধান গাছের গোড়ায় সর্বদা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি ধরে রাখা দরকার।
আবহাওয়া অধিদফতর আগামী ৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাসে (রোববার থেকে সোমবার) বলছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগে ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ময়মনসিং, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বোরো ধান নিয়ে সতর্কবার্তা : এ অবস্থায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে ব্রি (বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট) কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়েছে। পরামর্শগুলো হলো- কাইচ থোড় থেকে শক্ত দানা অবস্থা থাকা ধান গাছে তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষার জন্য জমিতে সর্বদা ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে; এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়। এ অবস্থায় শীষ ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হতে পারে। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই প্রিভেনটিভ হিসেবে বিকেল বেলা ট্রুপার ৮ গ্রাম-১০ লিটার পানি অথবা নেটিভো ৬ গ্রাম-১০ লিটার পানি ৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ দিন ব্যবধানে দুইবার স্প্রে করতে হবে। ধানে বিএলবি ও বিএলএস রোগ ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ৬০ গ্রাম থিওভিট, ৬০ গ্রাম পটাশ ও ২০ গ্রাম জিংক ১০ লিটার পানিতে সমভাবে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে স্প্রে করতে হবে।
সবজি ফসলে করণীয় : বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) বলছে, দেশে আরো কিছুদিন তীব্র তাপদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় সবজি চাষিদের জন্য কিছু পরামর্শ দেয়া হয়। ফল জাতীয় সবজি, যেমন- বেগুন, টমেটো, মরিচ, মিষ্টিমরিচ, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটোল, শসা ও ঢেঁড়স ইত্যাদি ক্ষেতে তিন-চার দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। অন্য দিকে, পাতা জাতীয় সবজি যেমন- ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক, কলমি, লাউশাক ইত্যাদি ক্ষেতে দুই-তিন দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
বারি বলছে, প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করা উত্তম। তাপদাহ কমলেও সবজি গাছের ফল সংগ্রহ শেষ হওয়া পর্যন্ত পাঁচ-সাত দিন অন্তর সেচ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, এতে ফলন বাড়বে। মাটিতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য সেচের পর গাছের গোড়ায় মালচিং করা জরুরি।
উল্লেখ্য, দেশের পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে পানির তীব্র সঙ্কট সেখানে অবশ্যই সেচের পর সময়মতো মালচিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মালচিংয়ের ক্ষেত্রে কচুরিপানা, খড়, গাছের পাতা অথবা আগাছা ইত্যাদি গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে ব্যবহার করতে হবে।
জৈব সারের পানি ধারণ ক্ষমতা বেশি, সেজন্য জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছে পুষ্টি কম থাকলে গাছের প্রয়োজন মতো সংশ্লিষ্ট পুষ্টি উপাদান (ইউরিয়া, এমওপি, বোরন, জিংক) মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে। যে সব অঞ্চলে (পশ্চিম-উত্তর) তীব্র পানি সঙ্কট ও তাপদাহ সেখানে গাছে সকালে অথবা বিকেলে পানি স্প্রে করা যেতে পারে। রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য বালাইনাশক অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োজন অনুযায়ী ৭-১০ দিন বিরতিতে স্প্রে অব্যাহত রাখতে হবে। উল্লেখ্য, যেসব সবজিতে সকালে ফুল ফোটে সেগুলোতে বিকেলে এবং যেসব সবজিতে বিকেলে ফুল ফোটে সেগুলোতে সকালে স্প্রে করতে হবে।
ফল ফসলে করণীয় : বারির বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাটির বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে, ফলন্ত আম গাছে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য ফল যেমন- লিচু, জামরুল, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি ফলন্ত গাছেও ৭-১০ দিন অন্তর সেচ প্রদান করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত বেসিন পদ্ধতিতে (গাছের চার পাশে রিং তৈরি করে) সেচ প্রদান করা উত্তম। তবে প্লাবন পদ্ধতিতেও সেচ দেয়া যাবে। তাপদাহ কমলেও ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন অন্তর সেচ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, এতে ফল ঝরে পড়া কমবে ও ফলন বৃদ্ধি পাবে।
মাটিতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য সেচের পর গাছের গোড়ায় মালচিং করা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, পাহাড়ি ও বরেন্দ্র অঞ্চলে অর্থাৎ যেখানে পানির তীব্র সঙ্কট সেখানে অবশ্যই সেচের পর মালচিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মালচিংয়ের ক্ষেত্রে কচুরিপানা, খড়, গাছের পাতা অথবা আগাছা ইত্যাদি গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে ব্যবহার করতে হবে।
যে সব অঞ্চলে (পাহাড়ি ও বরেন্দ্র) তীব্র পানি সঙ্কট ও তাপদাহ সেখানে গাছে সকালে অথবা বিকেলে পানি স্প্রে করা যেতে পারে। লিচুর ক্ষেত্রে ফল ঝরা রোধে ও ফলের সঠিক বৃদ্ধি জন্য সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সী গাছের ক্ষেত্রে ২৫০-৩০০ গ্রাম ইউরিয়া ও এমওপি সার মাটিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বয়স ভেদে সারের মাত্রা কম-বেশি হতে পারে। সার প্রয়োগের পর অবশ্যই হালকা সেচের ব্যবস্থা করতে হবে
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প কম্পোনেন্ট সি-বিডব্লিউসিএসআরপির হালনাগাদ তথ্যে বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার জন্য কিছু পরামর্শ দেয়া হয়।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে ডিএই শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাষে বলছে, উপরের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এমতাবস্থায় তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান ফসল রক্ষার জন্য ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ৫-৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এ সময় জমিতে যেন পানির ঘাটতি না হয়। বর্তমান আবহাওয়ায় ধান গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে শীষ ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হতে পারে। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই প্রিভেন্টিভ হিসেবে বিকেল বেলা ট্রুপার ৮ গ্রাম-১০ লিটার পানি অথবা নেটিভো ৬ গ্রাম-১০ লিটার পানি ৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ দিন ব্যবধানে দুইবার স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো: তাজুল ইসলাম পাটোয়ারি বলেন, আমরা দেশের সব জেলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। এই তাপদাহের সময় যাতে বোরো ধানের গোড়ায় সব সময় পানি রাখতে হবে। দেশে এবার কোথাও এখনো ধানে ব্লাস্ট আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। তবে হিটস্ট্রোক থাকলে হাওরের জন্য ভালো। কারণ সেখানে ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
হামাসের সাথে চুক্তি চায় ৭২ শতাংশ ইসরাইলি গাজার উত্তরের সর্বশেষ অর্থোপেডিক সার্জন নিহত মালয়েশিয়ায় বাধ্য শ্রমের অভিযোগ : মামলার অনুমতি পেল বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিজয় দিবসে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি ইসলামি শ্রমনীতি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে : মুহাম্মদ শাহাজাহান অভিবাসী ফেরত না নিলে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি ট্রাম্পের খুলনা রেলস্টেশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘শেখ হাসিনা আবার আসবে’ ঘূর্ণিঝড় চিডোর কারণে ফ্রান্সের মায়োটে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি ঢাকায় পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তা মুক্তিযোদ্ধা দলের মহাসমাবেশে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া একই দিনে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে

সকল