১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দেশে প্রথমবারের মতো জিরা চাষে সফলতা

বছরে ৩২ হাজার টন আমদানিতে খরচ দুই হাজার কোটি টাকা
দেশে প্রথমবারের মতো জিরা চাষে সফলতা -


শতভাগ আমদানিনির্ভর উচ্চমূল্যের মসলাজাতীয় ফসল জিরা। মাছ, গোশত থেকে শুরু করে বাঙালির রান্নায় জিরার ব্যবহার বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে জিরা আমদানি হয় ৩২ হাজার ৩৫১ মেট্রিক টন। হাজার টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে এই জিরা। যদিও সম্প্রতি এ দাম কমেছে। প্রতি বছর জিরা আমদানির পেছনে বিদেশে চলে যায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। আশার কথা হলো- বাংলাদেশে এই উচ্চমূল্যের মসলা জিরার পরীক্ষামূলক চাষাবাদে সফলতা এসেছে। এ বছর দেশের ১০-১২টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় ৪০টি প্রদর্শনী দেয়া হয়। যার বেশির ভাগই সফল হয়েছে। উচ্চমূল্যের এই ফসল চাষে সফলতা আসায় কৃষকরাও বেশ উদ্বুদ্ধ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অবমুক্ত করা হয় বারি জিরা-১। প্রথমবারের মতো এবার বারি জিরা-১ চাষে সফলতা এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মসলার উন্নতজাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০টি উপজেলার ৩০টি স্থানে বারি জিরা-১ এর প্রদর্শনী দেয়া হয়। প্রতি প্রদর্শনীর পরিমাণ ১০ শতাংশ। প্রকল্পের পক্ষ থেকে কৃষককে জিরা বীজ, সারসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করা হয়।থ পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কৃষককে জিরা চাষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে জানান, প্রকল্প পরিচালক রাসেল আহমেদ। তিনি জানান, শতভাগ আমদানিনির্ভর জিরা পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা এসেছে। এটি সম্প্রসারণ করা হলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। আমরা মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বীজ নিয়ে প্রদর্শনী দিয়েছিলাম। জিরার বীজ সরবরাহ বাড়লে আবাদের সম্প্রসারণ দ্রুত বাড়বে। এবার প্রকল্প থেকে ১০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে। আর মসলা গবেষণা থেকে যদি ২০ কেজি পাওয়া যায়, তাহলে আশা করছে আগামী বছর দেড় শ’ প্রদর্শনী দেয়া যাবে।

কৃষিবিদ রাসেল আহমেদ জানান, জিরাসহ মোট ১৫টি মসলা জাতীয় ফসল আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে ৫ শতাংশ বাড়ানো প্রকল্পের টার্গেট। এটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। আমরা যেহেতু শতভাগ আমদানির ফসল জিরা মাঠপর্যায়ে চাষে সফলতা পেয়েছি। কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদন বাড়ানো গেলে এটির দ্রুত সম্প্রসারণ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ শতাংশ জমিতে জিরা চাষে খরচ হয় চার-পাঁচ হাজার টাকা। ফলন হয় ১৮-২০ কেজি। ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করলে দাম হয় ১১-১২ হাজার টাকা। তবে জিরার বাজার মাঝে মধ্যেই হাজার টাকার ঘরে চলে যায়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে প্রথমবারের মতো জিরা চাষে সফল হয়েছেন বড় সাতাইল-বাতাইল গ্রামের মসলা চাষি দিলবর আলী। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ১০ শতাংশ জমিতে জিরা চাষ করেছিলেন। তিনি জানান, জিরা চাষে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১০ শতক জমিতে নিয়ম মেনে সেচ, সার প্রয়োগ ও সঠিক পরিচর্যায় ভালো সফলতা পেয়েছি। আগে জানলে আরো বেশি জমিতে জিরার চাষ করতাম। তবে আগামী বছর বেশি জমিতে জিরার চাষ করব।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়া বিজ্ঞানীরা বারি জিরা-১ জাতটি দীর্ঘ গবেষণার পর উদ্ভাবন করেন। ২০২২ সালে যখন কৃষি মন্ত্রণালয় জাতটি অবমুক্ত করে তখন গবেষকদের নেতৃত্বে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মাহমুদুল হাসান। এই গবেষক জানান, এক বিঘা জমিতে ৮০০ থেকে ১০০০ গ্রাম (১ কেজি) জিরার বীজ দরকার হয়। জিরা চাষে প্রতি বিঘায় সর্বোচ্চ ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। ২০০৮ সাল থেকে এটি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। দীর্ঘ গবেষণার পর আমরা সফল হই।
তিনি জানান, গতবার প্রায় ২৬ কেজি জিরা বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল। এবার ৫০ কেজির বেশি হবে। এর বাইরে চাষিদের কাছেও আরো এ পরিমাণ বীজ থাকার কথা। জিরা টোটালি বিদেশী ফসল। দীর্ঘ গবেষণার পর আমরা সফল হয়েছি। এই মুহূর্তে বলা চলে সারা দেশেই চাষ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, গবেষণা এখনো চলমান আছে।

এই বিজ্ঞানীর মতে, বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জিরা বীজ বপন করা উচিত। যেখানে শীতের আমেজ একটু বেশি থাকবে, আর্দ্রতা একটু বেশি থাকবে, এ রকম বেলে দো-আঁশ মাটিতে জিরা চাষ করা সম্ভব।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শতভাগ আমদানিনির্ভর জিরা ইরানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হতো। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ বেশি। এ বছর ভারতে জিরা উৎপাদন বেশি হওয়ায় দামও কমেছে।
হিলি স্থলববন্দরের আমদানিকারকদের প্রতিনিধি জাবেদ হোসেন রাসেল বলেন, চাহিদা থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে অনেকটাই বেড়েছে জিরার আমদানি। এসব জিরা আসছে ভারতের গুজরাট থেকে। প্রতি কেজি জিরার শুল্ক দিতে হয় ২৩৩ টাকা। যাচ্ছে বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরে।
হিলি কাস্টমসের তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে জিরা আমদানি হয়েছে ৪৪৮ ট্রাকে ৭ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাসকে ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement