এক সময়ের ঢাবির ছাত্র মনিরুল সংসার চালান মাঝিগিরি করে
জীবন সংগ্রাম- শামীম হাওলাদার
- ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৬
অভাবের সংসার। বাবা-মায়ের বড় সন্তান মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। বাবা মৃত মোহাম্মদ মজিবর রহমান, মাতা মরিয়ম বেগম। ভাই-বোনের মধ্যে মনিরুল সবার বড়। বাবা বেঁচে থাকতে তার সাথে মানুষের ক্ষেতখামারে কাজ করতেন।
২০০৪ সালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে ৪.১৩ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন। যার রোল নম্বর ২১৩৬৯৫ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৭১৭৭৯ এবং স্কুলের নাম আজিজুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিশারকান্দি, পিরোজপুর, বরিশাল। এরপর থেকেই ঢাকায় এসে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইয়ে পাঁচজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী। বুড়িগঙ্গায় মাঝিগিরি অবস্থায় ২০০৬ সালে পিরোজপুরের নেছরাবাদ বলদিয়ায় আলহাজ আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ৪.৩০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। যার রোল নম্বর ৫১০৯৪০ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৬৪১২৮। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক স্টাডিজে চান্স পেয়েও তিন মাসের বেশি পড়তে পারেননি অর্থাভাবে।
মনিরুল জানান, ২০০৬-৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ সাবজেক্টে ভর্তি হই। পরে থাকার জায়গার সমস্যা, উপস্থিতি ৬০ শতাংশ না হলে পরীক্ষায় অ্যাটেন করতে দিতো না। তাছাড়া আর্থিক সমস্যাও ছিল। তারপরও পাঁচ মাস অনিয়মিত ক্লাস করেছি।
তিনি থাকতেন রায়েরবাগে। কাজ করতেন মোহাম্মদপুর সাদেক খানের ইটের ভাটায়। ওখানে চার মাস কাজ করেন।
তিনি বলেন, মাসে দুই হাজার টাকা বেতন পেতাম। এরপর রাতে ডিউটি করে ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। পরে গ্রামে চলে যাই এবং এলাকায় বদলা দেয়া শুরু করি। পরে ২০১৪ সাল থেকে ফের মাঝিগিরি শুরু করি। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মুক্তা খানমকে বিয়ে করি। পরে বিএম কলেজ থেকে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ২.৮৮ পেয়ে ১৭ সালে উত্তীর্ণ হই। টানা ১০ বছর যাবৎ নৌকাবাইয়ে জীবন-জীবিকা চালাই। তিনি বলেন, এ সমাজে কেউ কারো নহে। কেউ একটা চাকরি দেয় না। সরকারি চাকরিতে ২০ বারেরও বেশি ইন্টারভিউ দিয়েছি। লিখিত পরীক্ষায় টিকলেও মৌখিক পরীক্ষায় আউট করে দেয়। আবার যখন মাঝিগিরি করে লেখাপড়া করি তা শুনে উপহাসের সম্মুখীন হতে হয়। এখন তো আর সরকারি চাকরির বয়সও নেই। বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজঘাটে নির্ধারিত মাঝি তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নৌকা দিয়ে পার করি। কেউ কেউ নৌকা ভাড়া না দিয়ে গুণ্ডামি করে চলে যায়। তখন বসে বসে কান্না করা ছাড়া উপায় থাকে না। এই রোদ্দুরে বুড়িগঙ্গার ব্রিজঘাট থেকে ওয়াইজঘাটে নৌকা বাই। তারপরও কোনো যাত্রীর দয়া হয় না। উল্টো কেমনে পাঁচ টাকা কম দিবে সেই ধান্দায় থাকে। দৈনিক নৌকা ভাড়া, ঘাটখরচ, নৌকা পাহারা খরচ দেয়ার তিন থেকে চার শ’ টাকা থাকে। তাই বাসা ভাড়া নিতে পারি না। এজন্যই নৌকায় ঘুমাই। প্রস্রাব পায়খানা নদীতে করতে হয়। এছাড়া তিন বেলা হোটেলে খাই আলু ভর্তা ডাল দিয়ে। তবে মাঝে মাঝে মাছ খাই। গোশত দিয়ে কোনো দিন খাওয়া হয় না ভাত- এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিরুল।
তার গ্রামের বাড়ি বিশারকান্দি, পো: বিশারকান্দি, উপজেলা বানারিপাড়া, জেলা বরিশাল।