১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
জাজিরায় আ’লীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার

পুলিশ মোতায়েন থাকলেও থামছে না ককটেল বোমার বিস্ফোরণ

-


কিছুক্ষণ পরপরই মুহুর্মুহু ককটেল বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে জাজিরার বিলাশপুরের কয়েকটি গ্রাম। সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিভিন্ন স্থানে ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। এক দিকে পুলিশ থাকলে অপর দিক থেকে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে ককটেল ফাটিয়ে হামলা ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এসব এলাকার নারী-শিশুসহ অসুস্থ সাধারণ মানুষ। জানা গেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী চেয়ারম্যানের সমর্থকদের চলমান সংঘর্ষের সময় এভাবেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় ৮/১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও কয়েকজন আহত হলেও সর্বশেষ বুধবার রাত ১০টার দিকে ককটেল বোমার আঘাতে সজীব মুন্সী (২৫) নামে এক যুবকের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত সজীব জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী মুন্সীর ছেলে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার করতে বিলাশপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জাজিরা উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য জলিল মাদবরের সাথে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায়ই হঠাৎ করে দুই পক্ষের সমর্থকরা মুহুর্মুহু ককটেলের শব্দে পুরো ইউনিয়ন কাঁপিয়ে তোলে। গত মঙ্গলবার সকালে মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের দুই চাচাতো ভাই জমিজমার বিরোধ নিয়ে মারামারি করেন। বিকেলে ওই মারামারি আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। খবর পেয়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের কয়েকটি টিম সেখানে টহলে থাকলেও বুধবার সন্ধ্যা থেকে আবারো ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মিয়াচান মুন্সী কান্দি গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাদবর ও মামুন মাদবরের বাড়িসহ অন্তত ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। এ সময় ককটেলের আঘাতে সজীব মুন্সী নামে একজন গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পেলেক্সে নিয়ে যায়। সজীব মুন্সীর পেটের নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক বলেন তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার ররাতের ঘটনায় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হলেও তারা পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থেকেই চিকিৎসা নেয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।

স্থানীয় আব্দুর রহিম বলেন, বিলাশপুরে কুদ্দুস চেয়ারম্যান ও জলিল মাদবর গ্রুপের সংঘর্ষ একবার শুরু হলে টানা কয়েক দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষেরই থামার নজির নেই। একটানা কয়েক দিন ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা ভীত হয়ে পড়েন। প্রশাসন আরো কঠোর অবস্থানে না গেলে এই দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামবে না।
এ বিষয়ে জলিল মাদবর বলেন, গত মঙ্গলবার জমি নিয়ে দুই চাচাতো ভাইয়ের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পরে কুদ্দুস বেপারীর লোকজন ককটেল বোমা নিয়ে আমার লোকজনের উপর হামলা করেছে। এ সময় একজনের হাতও ভেঙে যায়। বুধবার রাতে কুদ্দুস বেপারী নিজে তার লোকজন নিয়ে এসে বোমা মারে। এতে আমার সমর্থক সজীব নামে একজনের নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। আমি ঢাকায় আছি, এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করব।
শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, বিলাশপুরে ককটেল বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের খবর পেয়েই আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টিম মোতায়েন করেছি। দ্রুত পুলিশ মোতায়েন করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়ানক হওয়ার সুযোগ ছিল। অভিযোগ দায়ের হলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবো।


আরো সংবাদ



premium cement