৭ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনবে সরকার
ভারত থেকে কেনা হবে সয়াবিন- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দু’টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাত হাজার ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। এ ছাড়াও ভারত থেকে কেনা হবে সয়াবিন তেল। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ, ভারত থেকে সয়াবিন তেল আমদানিসহ সাতটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় আট হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির ভার্চুয়াল এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৈঠক শেষে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাব অনুমোদন এবং স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে যৌথভাবে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড, ইনটেক এনার্জিস ও সাউদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ২১.১০৫ টাকা হিসাবে ২৫ বছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে প্রায় চার হাজার ৬৮ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) কর্তৃক ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং স্থাপিতব্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ ক্রয়ের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে যৌথভাবে চীনা প্রতিষ্ঠান বিইআইএইচসিএল, বিজেডএইচই, ইএনএএম ও এমএনএস। প্রতি কিলোওয়াট/ঘণ্টা ১১.০০৫৮ টাকা হিসাবে ২০ বছর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারকে প্রায় তিন হাজার ৫৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুই লিটার পেট বোতলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান গ্রিন ন্যাশন বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স এ তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫৪.২৯ টাকা। তিনি জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় কাতার ও সৌদি আরব থেকে সার আমদানি এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড-কাফকো থেকে সার ক্রয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তিনটি সার ক্রয়ের প্রস্তাবের মধ্যে কাতারের মুনতাজাত থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৮৩.৮৩ ডলার। সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৭০.৮৩ ডলার। কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড-কাফকো থেকে ৯ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ১২১ কোটি আট লাখ ৭১ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৬৩.৬২৫ ডলার।
অতিরিক্ত সচিব জানান, এ ছাড়া বৈঠকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০২-এর পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এ কাজটি করবে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তিনি জানান, ক্রয় কমিটির বৈঠকের আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি) আমদানিতে আরো তিনটি দেশের (চীন, মালয়েশিয়া ও জর্দান) সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চুক্তির মাধ্যমে আমদানির প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিএডিসি ছয়টি দেশের (সৌদি আরব, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা, রাশিয়া ও বেলারুশ) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে নন-ইউরিয়া সার আমদানি করে।