জুলিয়েট-পিলপিলের বয়স বেড়েছে নতুনদের সময় লাগবে আরো ১২ বছর
- সেকান্দার আলী মংলা (বাগেরহাট)
- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:৪১, আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৯
সুন্দরবনের লোনা পানির কুমির রক্ষায় তৈরি করা হয়েছিল করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র। অথচ গত চার বছর ধরে কুমিরের প্রজনন ও উৎপাদন বন্ধ। এ জন্য কেন্দ্রের কুমিরের বয়স আর মেদ বাড়াকে দায়ী করছে বনবিভাগ। এতে বনের লোনা পানির কুমির বিলুপ্তির শঙ্কায় রয়েছে ২৩ বছর আগে গড়ে ওঠা করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র।
দু’টি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং পুরুষ কুমির রোমিওকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে কেন্দ্রটি। ডিম থেকে বাচ্চা এবং তা লালনপালন করে কিছুটা বড় হলে ছেড়ে দেয়া হয় নদীতে। তবে রোমিও জুলিয়েট আর পিলপিলের এখন বয়স বেড়েছে। কমে গেছে প্রজননক্ষমতা। যাতে প্রভাব পড়েছে উৎপাদনে। বনবিভাগ বলছে, কেন্দ্রের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কুমিরে প্রজনন ক্ষমতা হতে সময় লাগবে ১২ বছর। তখন ডিম পাড়া শুরু করলে কুমিরের বাচ্চা পাওয়া যাবে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘২০১৮, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালের এই চার বছরে এখানে কুমির থেকে কোনো ডিম আসেনি। যে কারণে বাচ্চাও হয়নি। সম্ভবত কুমিরের বয়স হয়ে যাওয়ায় এই অবস্থা হয়েছে। তবে কুমিরের প্রজনন ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে করমজলের ভেতরে আরেকটি পুকুরে আরো ছয়টি নতুন কুমির ছাড়া হয়েছে। যার বয়স সাত থেকে আট বছর হয়েছে। এই ছয়টির মধ্যে দু’টি পুরুষ এবং চারটি নারী কুমির রয়েছে। এগুলোর বয়স ১৪-১৫ বছর হয়ে গেলে ডিম পাওয়া যাবে। তারপর বাচ্চা। বর্তমানে করমজলে ১০০টি কুমিরের বাচ্চা রয়েছে।’
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় সিডরে ভেসে গেছে ৭৫টি কুমির। এ ছাড়া বনের চিতা বিড়াল মেরে ফেলেছে ৬২টি বাচ্চা। খাদ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তবে প্রজনন বাড়াতে পারলে করমজল থেকে কুমির রফতানির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
সূত্র আরো জানায়, সুন্দরবনের দুবলারচরে ১৯৯৭ সালে লবণ পানি প্রজাতির কুমির ধরা পড়ার পর স্বপ্ন দেখা শুরু করে বনবিভাগ। তারা তখন কুমিরের বংশ বৃদ্ধির প্রাথমিক কাজ শুরু করে। এরপর ২০০২ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে আট একর বনাঞ্চলে কুমির প্রজননকেন্দ্র চালু করে। বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই প্রজননকেন্দ্রের জন্য সেসময় ব্যয় ধরা হয় ২৩ লাখ টাকা।
বন কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ২০০২ সালে প্রজননকেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করলেও বাচ্চা দেয় তিন বছর পর ২০০৫ সালে। ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর সুপার সিডরে এই কেন্দ্রের ৭৫টি কুমির ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে ২০৬টি বড় কুমিরের বাচ্চা সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দুই রাতে এই প্রজননকেন্দ্রের শেডের নেট ভেঙে একটি চিতা বিড়াল ৬২টি কুমিরের বাচ্চা মেরে ফেলে ও খেয়ে ফেলে। পরের বছর করমজল কেন্দ্রের দু’টি মা কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৯১টি ডিম পাড়লেও তা থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, সুন্দরবনের কুমির প্রজননের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। না হলে শুধু প্রজননকেন্দ্র থেকে সরবরাহ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে কুমির বাড়ানোর জন্য আমাদের কিছু উঁচু টিলা তৈরি করতে হবে। যেখানে কুমির এসে ডিম পাড়তে পারে এবং কুমিরের ডিম যেন অন্য প্রাণী না খেতে পারে, সেগুলো যেন সুন্দরভাবে বাচ্চা ফুটাতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ ছাড়া কুমির বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যে বরাদ্দ বাড়াতে পারলে করমজল প্রজননকেন্দ্র থেকে কুমির রফতানি সম্ভব বলেও জানান তিনি।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, ‘সুন্দরবনের করমজলে কুমির প্রজনন বাড়াতে এবং কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, খাদ্যের বরাদ্দ বাড়ানোসহ দক্ষ জনবল ও সরকারিভাবে প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা