২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্ধ হচ্ছে না দোহাজারী কালিয়াইশ পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট

বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ
বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট : নয়া দিগন্ত -


টানা তিন দিন ধরে জাতীয় গ্রিডে ৩২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলে স্থাপিত বহুল প্রত্যাশিত এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে। গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করলেন ওই পাওয়ার প্ল্যান্টের সিনিয়র কর্মকর্তা (ডিপিডিই) প্রকৌশলী ফাইজুর রহমান। তিনি জানান, গত তিন দিন ধরে একাধারে ৩১৮ থেকে ৩২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এ দিকে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু মেরামতের কারণে দোহাজারী কালিয়াইশ ১১০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ওই পিকিং প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ত্রুটি সারিয়ে তোলার জন্য চলতি মাসের (জুনের) ২০ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে অন্তত তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য সেতু চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে। সে কারণে গড়ে প্রতিদিন দুইবার করে অতিরিক্ত ফার্নেস ওয়েল ওয়াগনের মাধ্যমে আনা হচ্ছে এবং তা মজুদ করে রাখা হচ্ছে। সে কারণে সেতু বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে না। দোহাজারী-কালিয়াইশ পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ দিয়ে ওয়াগনে করে প্ল্যান্টের জ্বালানি ফার্নেস অয়েল আনা হয়।

বাঁশখালী এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে গত মাসের ২৪ মে থেকে একটি ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ওই দিন সর্বোচ্চ ১৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও ২৫ মে বৃহস্পতিবার থেকে তা বেড়ে ১৭০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই পাওয়ার প্লান্টের সিনিয়র কর্মকর্তা (ডিপিডিই) প্রকৌশলী ফাইজুর রহমান। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, শুরুতে আমরা ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি। পর্যায়ক্রমে ১৭০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে প্রতিদিনই বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে প্রতিদিনই বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সে কারণে তিন দিন ধরে গড়ে ৩১৮ থেকে ৩২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন ওই পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেয়া হচ্ছে।

পাওয়ার প্ল্যান্টের সিনিয়র কর্মকর্তা (ডিপিডিই) প্রকৌশলী ফাইজুর রহমান পিজিসিবির (জাতীয় পাওয়ার গ্রিড) কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বিষয়টি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন বিদ্যুৎ জেনারেশন করা ইউনিট থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে তিনি জানান, ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হয়েছে তা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বাঁশখালী পৌঁছবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়লা না আসা পর্যন্ত সাময়িকভাবে কয়েক দিন উৎপাদন বন্ধ থাকতে পারে বলে তিনি গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে জানান।
গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে নির্মিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের একটি ট্রান্সফরমারে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, পরে ১৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় ট্রান্সফরমারে বিদ্যুৎসংযোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে কমিশনিং শুরু করার পরে গত বুধবার ২৪ মে থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই প্রকল্পে সিনিয়র কর্মকর্তা (ডিপিডিই) প্রকৌশলী ফাইজুর রহমান। কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষম পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ২.৬০ বিলিয়ন ডলার। এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট দেশে সর্বপ্রথম বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় কয়লাভিত্তিক বৃহৎ একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।

এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির যৌথ মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট ১৪ জানুয়ারি দুপুর ১.৫৬ মিনিটে সুইচ অন করে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাওয়ার প্ল্যান্টি জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত হয়। ওই দিন সরকার গঠিত ব্যাক ফিড কমিটির ৯ জন সদস্যই এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওই কমিটির প্রধান ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) প্রধান প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান সুইচ অন করে জাতীয় গ্রিডের সাথে প্ল্যান্টে সংযোগ স্থাপন করেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এটি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প হলেও পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা নেই, এটি সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির প্রকল্প। এ প্রযুক্তিতে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে। এখানে পরিবেশ দূষণের কোনো আশঙ্কা নেই। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এস এস পাওয়ারের মধ্যে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ক্রয়সহ আনুষঙ্গিক চুক্তি হয় এবং ওই বছরই বহুল প্রত্যাশিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। যৌথ মালিকানার মধ্যে (৭০ শতাংশের মালিকানা রয়েছে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশ) রয়েছে বলে জানা গেছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের বড়ঘোনায় প্রায় ৫০৬ একর জায়গায় গড়ে উঠছে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মালিকানাধীন কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের

সকল