২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একদিন পর পুঁজিবাজারে উত্থান

বাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে
-

দেশের পুঁজিবাজার থেকে বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়। শেয়ারবাজারে মন্দা ভাব বিরাজ করলেও এক বছরের এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে বেশ ভালো ভাবেই।
তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের মে মাসে পুঁজিবাজার থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২৩ সালে সরকার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এই টাকা বেশি রাজস্ব পেয়েছে।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালের মে মাসে ডিএসইতে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি লেনদেন হওয়ায় সরকার স্টক এক্সচেঞ্জ হোল্ডারদের লেনদেনের ওপর কমিশন থেকে উৎসে কর বাবদ ৩ কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৬১ টাকা বেশি পেয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিএসইতে চলতি বছরের মে মাসে দেশের ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৯০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও)ধারীদের ১৮ হাজার ৬৭৩ কোটি ৭০ লাখ ৯ হাজার ২৭২ টাকার শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বন্ডের লেনদেন হয়েছে। সেখান থেকে কর বাবদ সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২০ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৬২৫ টাকা।
এর আগের বছর ২০২২ সালের মে মাসে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছিল ১৪ হাজার ৬১২ কোটি ২৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৯ টাকার শেয়ার। সেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের মে মাসে লেনদেন বেড়েছে। আর লেনদেন বাড়ায় সরকার এ খাত থেকে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৬১ টাকা রাজস্ব বেশি পেয়েছে।
শুধু আগের বছরের তুলনায় নয়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের তুলনায়ও মে মাসে সরকারের রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে। এপ্রিল মাসে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ১৭ হাজার ৮০৭ টাকা।
জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ডিএসইতে যত লেনদেন বাড়বে, সরকার তত এখান থেকে রাজস্ব আয় পাবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল রাখতে তালিকাভুক্ত-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যবধান রাখার দাবি জানিয়েছি। সরকারি, বেসরকারি এবং বহুজাতিক ভালো ভালো কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছি। এসব কোম্পানি বাজারে এলে বাজার চাঙা থাকবে। লেনদেন ৫শ’ ১ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৪ হাজার বা ৫ হাজার কোটি হলে সরকারও অনেক বেশি রাজস্ব পেতো। সুতরাং লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগ সরকারকে নিতে হবে। এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা দুই পা এগোলে এক পা পেছায়। আমরা চেষ্টা করছি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা দূর করতে। বিনিয়োগকারীদের সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ দিতে। বিনিয়োগকারীরা সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ পেলে বাজারে আসবে। তা হলে লেনদেন বাড়বে। আর লেনদেন বাড়লে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব আরো বেশি পাবে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দুই ধরনের শেয়ার কেনাবেচা থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে। প্রথমটি হলো, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে রাজস্ব আয়। দ্বিতীয়টি হলো, বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় ব্রোকারেজ হাউজের ওপর আরোপিত কর।
ডিএসইর তথ্য মতে, দুই ধরনের করের মধ্যে প্রথমটি হলো ৫৩ বিধি ধারা, এই ধারায় ডিএসইর স্টেক হোল্ডারদের অর্থাৎ ব্রোকার হাউজের প্রতিনিধিদের লেনদেনের ওপর দশমিক ০৫ শতাংশ কর। এ খাত থেকে এপ্রিলে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার ৩১২ টাকা। আগের বছরের একই মাসে এই রাজস্ব আয় ছিল ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ৫১৭ টাকা।
অন্য দিকে, বিএসইসি রুলস ৫৩-এম অনুসারে স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার কেনাবেচা বাবদ লেনদেন ও শেয়ার হস্তান্তর থেকে ৫ শতাংশ হারে কর বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৩ টাকা। ২০২২ সালের একই সময়ে এই রাজস্ব আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৯ টাকা। সব মিলিয়ে ডিএসই থেকে চলতি বছরের মে মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২০ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৬২৫ টাকা। ডিএসই এই টাকা সরকারের কোষাগার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছে। তার আগের এপ্রিল মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ১৭ হাজার ৮০৭ টাকা।
এক মাস হিসাবে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও অর্থবছরের হিসাবে সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ে মোট ১১ মাসে ৭৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার ৯৭৫ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে, সরকার চলতি বছরের ১১ মাসে ডিএসই থেকে রাজস্ব বাবদ পেয়েছে ২৫৫ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৩৫৯ টাকা। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের লেনদেন থেকে সরকার ৩৩৪ কোটি ৯১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৪ টাকা রাজস্ব পেয়েছিল। অর্থাৎ ৭৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার ৯৭৫ টাকা বঞ্চিত হয়েছে সরকার। এ দিকে বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দরপতনের একদিন পর সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার (৬ জুন) দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান হয়েছে। এ দিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ২২ পয়েন্ট। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ৩৫ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দামও। তবে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর আগের দিন মঙ্গলবার দরপতন হয়েছিল। সূচকের পাশাপাশি অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন কমেছিল।
গতকাল বাজারটিতে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৮ হাজার ৬৯৭ শেয়ার ও ইউনিট কেনা-বেচা হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৮২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৮৬ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে।
লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৩টির, কমেছে ৪৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম।
এ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৩৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই ৩০ সূচক দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। এর পর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার। পরের তালিকায় রয়েছে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। এ ছাড়া শীর্ষ ১০-এ ছিল যথাক্রমে আরডি ফুড, সোনালী লাইফ, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুড এবং আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ দিন সিএসইতে ২১০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ৪৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৯০টির দাম।
দিন শেষে সিএসইতে ১৪ কোটি ৭ লাখ ৫৬ হাজার ৫১ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬২ টাকার শেয়ার।


আরো সংবাদ



premium cement