২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিরিরবন্দরে তাপদাহে লিচুতে ক্ষত

আফছার আলী খান
চিরিরবন্দরে তাপদাহে লিচুতে ক্ষত -


অনাবৃষ্টি আর চলমান তাপদাহে ঝলসে যাচ্ছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার গাছের পাকা লিচু। লিচুর গায়ে পোড়া দাগ পড়ছে এবং ফেটে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই এ বছর লিচুর আকার ছোট হয়েছে। অন্য দিকে বাজারেও কাক্সিক্ষত মূল্য পাচ্ছেন না বাগানি ও ব্যবসায়ীরা। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন অনেক লিজ নেয়া বাগানি। তারপরেও ভালো মানের লিচু এখনো ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় রাতে গাছে পানি প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।
এদিকে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে সময়ের আগেই লিচু বাজারে এসেছে। কয়েকজন লিচুচাষি ও বাগান লিজ নেয়া বাগানি জানান, এবার লিচুর মৌসুম তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। রসালো লোভনীয় চিরিরবন্দরের লিচুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রখর রোদের কারণে বেশির ভাগ লিচুর খোসা পুড়ে গেছে, না হয় ক্ষত হয়েছে। আবার কিছু লিচুর আকৃতি বড় হতেই খোসা ফেটে যাচ্ছে। ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন লিচুচাষি ও লিজ নেয়া বাগানিরা।

উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীরবন্দর ও ঘুঘুরাতলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড তাপদাহে বাজারে জোগান বেড়ে যাওয়ায় লিচুর দাম পড়ে গেছে। কয়েকদিন পূর্বের তুলনায় লিচুর দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাজারে তেমন ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। মৌসুমের শুরুতেই মাদ্রাজি জাতের লিচু প্রতি হাজার তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেখানে রোদে পুড়ে ওই লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার মাত্র ৮০০-৯০০ টাকায়। এছাড়াও বোম্বে জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়, চায়না-টু, চায়না-থ্রি জাতের লিচু আকারভেদে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার এবং কাঁঠালি, বেদানা জাতের লিচু প্রতি হাজার ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ কয়েকদিন পূর্বেই বোম্বে জাতের লিচু প্রতি হাজার বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার, চায়না-টু, চায়না-থ্রি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার এবং কাঁঠালি, বেদানা ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়।

লিচু ব্যবসায়ী সিদ্দিক হোসেন জানান, উপজেলার সাতনালা ও আমতলী এলাকায় ৪টি লিচুর বাগান ক্রয় করেছেন তিনি। এসব বাগানে বোম্বাই জাতের লিচু রয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহে এসব বাগানের সিংহভাগ লিচু রোদে পুড়ে ফেটে যাচ্ছে ও ঝড়ে পড়ছে। এসব লিচু কোনো পাইকার বা আড়তদার ক্রয় করতে চাচ্ছে না। তিনি লিচু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। সবাই লিচু বাজারে বিক্রির জন্য গাছ থেকে পেড়ে আনছেন। এতে বাজারে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, এখনো ভালো মানের লিচুর দাম ভালোই আছে। প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহের কারণে লিচুচাষি ও বাগানিরা গাছে লিচু রাখতে পারছেন না। যারা বাগান ক্রয় করেছেন তারা পুরো বাগানের লিচু একই দামে বিক্রি করতে পারেননি। কিছু লিচু প্রখর তাপদাহের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় করছেন তারা। বর্তমানে দিনাজপুরে ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, যেহেতু লিচুর চামড়া অত্যন্ত পাতলা, সেহেতু লিচুতে দাগ লেগে লিচু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারে এবার লিচুর দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ায় হঠাৎ লিচু নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করায় লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাই উঠবে কি না তা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর খোসা পুড়ে ও ফেটে গিয়ে রস গড়িয়ে পড়ছে। অনুকূল আবহাওয়া ব্যতীত লিচুকে কোনো অবস্থাতেই টেকানো সম্ভবপর নয়। পরিপক্ক হলে এসব লিচু বাজারজাত করা উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল